কোরআনের শিক্ষার মাধ্যমে দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন।
সোমবার (০৪ নভেম্বর) সকালে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃতি হাফেজ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। হুফফাজুল কোরআন ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত বাছাইকৃত ১৪১ জন কৃতী হাফেজকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমির হাফেজ আল্লামা তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রফেসর আ ফ ম খালিদ হোসাইন বলেন, ইরান, পাকিস্তান, তুরস্ক, কুয়েত, জর্ডান, মিসর, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় আমাদের কচিকাঁচা শিশুরা ১ম স্থান অর্জন করে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে অনন্য স্থানে নিয়ে গেছে। কোরআনের হাফেজ-ক্বারি যতবেশি বানানো যাবে, ততই গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুদ্ধভাবে কোরআন চর্চা বৃদ্ধি পাবে। কোরআনের শিক্ষা সমাজের স্তরে স্তরে পৌঁছাতে হবে। তাহলে আগামীর বাংলাদেশ দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ হবে। জাতি এক নতুন বাংলাদেশ পাবে।
তিনি কৃতী হাফেজদের ভালো আলেম বানাতে উপস্থিত ওস্তাদদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা আজ বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উজ্জ্বল করেছে তারাই আলেম হয়ে সমাজকে আলোকিত করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম বলেন, হাফেজগণ হৃদয় মহাগ্রন্থ আল কোরআন বহন করেন। এই হাফেজগণ সমাজে কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিয়ে থাকেন। জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শীর্ষ হাফেজদের শীর্ষ আলেম হতে যত ধরনের সহযোহিতার প্রয়োজন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তরা জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিজয়ী হাফেজদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা ও সংবর্ধনা প্রদানের দাবি জানান। এবং প্রাথমিক স্তরে সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হেফজ বিভাগ চালু করারও দাবি করেন তারা। বক্তরা আরও বলেন, ইসলাম ব্যতিত সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না স্বীকৃত ও প্রমাণিত। তাই ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয়ভাবে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করা অতিব জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমির হাফেজ আল্লামা তাজুল ইসলাম বলেন, কোরআনের হাফেজগণ শুধু দুনিয়াতে আলো ছড়াবেন তা নয়। কোরআনের হাফেজদের থেকে মহান আল্লাহ নিজে কেয়ামতের ময়দানে কুরআন তেলওয়াত শুনবেন। একটি আয়াত পাঠ করলে এক তলা উপরে হাফেজগণ যাবে। এভাবে কোরআনের ৬ হাজার ৬শত ৬৬ আয়াত পাঠ করে হাফেজগণ সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে বসবেন। তিনি সম্মানিত হাফেজদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানাতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় হাফেজ ও আলেমদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তাই তিনি হাফেজ ও আলেমদের ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কাঁটাবন কেন্দ্রীয় মসজিদের খতীব অধ্যাপক ড. রফিকুর রহমান মাদানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. যোবায়ের মোহাম্মদ এহসানুল হক, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারী ড. খলিলুর রহমান মাদানী, তালিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. আবু ইউসুফ খান, গোপালগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ শায়েখ আব্দুল হামিদ, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি শায়েখ আবু তাহের জিহাদী।
খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ আমিরে শরীয়াত শায়েখ আবু জাফর কাসেমী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাদী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির শায়েখ আহমাদ আলী কাসেমী, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব শায়েখ মুফতি মো. ফখরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক ক্বিরায়াত সংস্থার চেয়ারম্যান শায়েখ ক্বারি আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. হারুন অর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব শায়েখ হাফেজ নাজির মাহমুদ, জাতীয় ইমাম মোয়াজ্জিন পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক, অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রাপ্ত সংবর্ধিত হাফেজ রাশেদুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন