বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঘরে আর বসে থাকতে পারেননি গৃহিণী মোছাম্মৎ শামীমা সুলতানা। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে মিরাজকে সাথে নিয়েই গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সুস্থ শরীরে ঘরে ফেরা হলো না তার। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। বর্তমানে সীমাহীন কষ্টে দিন কাটছে তার।
পাবনা সদর উপজেলার মালঞ্চী ইউনিয়নের সরদার পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী মোছাম্মৎ শামীমা সুলাতানা (৪৩)। বিগত ২০২১ সালের ৬ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে স্বামী আব্দুল্লাহ আল মামুন মারা যান। একমাত্র সন্তান মিরাজ হোসেন আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
গত ৪ আগস্ট ১১টার পর অ্যাওয়ার্ড কলেজ গেট থেকে বৈষম্যবিরোধী মিছিল বের হয়ে পাবনা প্রেস ক্লাবের পাশে আব্দুল হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান করে। ১২টার দিকে সমাবেশ স্থলের উত্তর দিক থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গুলি শুরু করে। পুলিশের হামলায় নিলয় ও জাহিদুল শহীদ হন। গুলির আওয়াজে আন্দোলনকারীরা এদিক ওদিক দৌড়াতে থাকে। এ সময় শামীমাও আহত হন। আহত শামীমাকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তার শরীরে অস্ত্রোপচার করেন। একটু সুস্থ হওয়ার পর ডাক্তাররা তাকে একুশ দিন পরে দেখা করতে বলেন। কিন্তু শামীমার ব্যথা আরও বাড়তে থাকায় তার আগেই তিনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ব্যান্ডেজ খোলার পর চিকিৎসকরা দেখতে পান তার পায়ের লিগাম্যান্ট ছিঁড়ে গেছে। তিনি বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ব্যাপারে আহত শামীমার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে মিরাজ হোসেন বলেন, আমি এবং আমার আম্মু প্রথম থেকেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমার বাবা বেঁচে নেই, মা অসুস্থ। এ অবস্থায় আমার লেখাপড়ার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা ভীষণ অর্থনৈতিক সংকটে আছি। তিনি আরও বলেন, বাংলা মাকে বাঁচাতে আমার দুধ মা ভালো নাই। তবুও আমার বাংলা মা ভালো থাক।
এদিকে আহত শামীমা বলেন, ‘আমি প্রথম থেকেই আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। গত ৪ আগস্ট বাসায় ভালো লাগছিল না। তাই বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। দুপুর ১২টার দিকে পাবনা শহরের প্রেস ক্লাব এলাকায় আন্দোলনকারীরা অবস্থান করে। সন্ত্রাসীরা যখন মিছিলে গুলি করে তখন আমি শহীদ নিলয় এবং জাহিদুলের পাশেই ছিলাম। মিছিলে গুলি চালালে আন্দোলনকারীরা ছোটাছুটি শুরু করে। এসময় আমি রাস্তায় পড়ে যাই। আমার শরীরের ওপর দিয়ে অনেকেই পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় আমি পদপিষ্ট হয়ে আহত হই। পাবনা জেলায় একমাত্র আহত নারী সম্ভবত আমি। আমি বিএনপি সমর্থিত মানুষ। আমার ছেলে মিরাজ ও ওই মিছিলে ছিল। আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে বেঁচে আছে।
তিনি জানান, বর্তমানে সিএমএইচে চিকিৎসা নিচ্ছি। কিন্তু আমার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় ছেলের পড়াশোনা এবং সাংসারিক খরচ চালাতে পারছি না। আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। ছেলে ঢাকা থাকায় আমাকে বাড়িতে সেবা করারও কেউ নেই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে অনেকেই নিহত ও আহত হয়েছেন। দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীন দেশে যেন আর কোনো বৈষম্য না থাকে এটাই আমার চাওয়া। আমার সুচিকিৎসার নিশ্চিতের এবং আন্দোলনকারীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন