স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞাকে দুর্নীতি দমনের হাতিয়ার (টুল) মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাই ভবিষ্যতের বড় প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি বিবেচনায় নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ’র সঙ্গে বৈঠকের পর সোমবার (৭ আগস্ট) পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একাডেমির রেক্টর মাশফি বিনতে শামস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব মিশনস আসাদ আলম সিয়াম ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ১১ জনের ওপর স্যাংশন দেওয়ার একটি খবরের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘নেফিউ বলেছেন, স্যাংশন দুর্নীতি দমনের টুল। ব্যক্তির বিরুদ্ধে বা কোনো দেশের বিরুদ্ধে হবে কি না তা আলোচনা হয়নি’।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতে পারে। এটি (স্যাংশন) যে কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে, শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়। তবে ভবিষ্যতের বড় প্রকল্পে ফান্ডিংয়ে পরিবেশের মতো দুর্নীতিও বিবেচনায় আনা হবে। তাই বাংলাদেশের যেন এ বিষয়ে প্রস্তুতি থাকে। এজন্য অবকাঠামো খাতে সংশ্লিষ্টদের আন্তর্জাতিক উদ্যোগগুলো নিয়ে সচেতন থাকার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
অর্থপাচার নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, টাকা পাচার দুর্নীতির অংশ। মানি লন্ডারিং নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। আমরা বলেছি, যেসব ব্যাংক বা ছোট ছোট আইল্যান্ড কান্ট্রি- সেগুলোতে সহজেই টাকা পাচার ও হুন্ডির মতো বিষয় আছে। এগুলোতে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকা দরকার। সব দেশেই কম-বেশি এ সমস্যা আছে। একটি দেশ বা সংস্থার পক্ষে শতভাগ দুর্নীতি দমন সম্ভব না। তাই বাংলাদেশ সবার সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। তবে সেগুলো আরও উন্নত করার সুযোগ আছে বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অর্থপাচার এবং তা ফেরত আনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, ফেরত আনা পরের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায় কোনো অর্থ পাচার হয়ে থাকলে সেসব কোন রুটে যাচ্ছে, তা জেনে আগে বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান রয়েছে। বরং ছোট ছোট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগে তথ্য মেলে না। এ সময় সুইজারল্যান্ডের সাম্প্রতিক তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অপারগতার কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্র সচিব।
বিদেশে যে টাকা যাচ্ছে সব অনিয়মের অর্থ না উল্লেখ করে মাসুদ বলেন, আমরা জানি মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বাংলাদেশি আছেন, যারা অনেক কষ্ট করে পয়সা উপার্জন করে কানাডায় গেছেন। অনেকে ব্যবসা করেন, তাদের রপ্তানি আয়ের একটা অংশ সেখানে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক পূর্বপুরুষের জমি-সম্পদ বিক্রি করেও সেখানে গেছেন। সেগুলো অবৈধ বা অনিয়ম বলা যাবে না। তবে টাকা কীভাবে নেওয়া হয়েছে তা দেখতে হবে।
পররাষ্ট্র সচিব আরও জানান, নেফিউকে আমরা জানিয়েছি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের বিষয়গুলো নিয়ে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশ মিশন, দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। এ সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশনা পালন করছে।
তিনি জানান, আগামী ডিসেম্বরে জর্জিয়ার আটলান্টায় অনুষ্ঠেয় দুর্নীতি দমনবিষয়ক সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্মেলনটি আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে তারা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দুর্নীতি দমনে নতুন করে সবার অঙ্গীকার চাইবে।
মার্কিন কূটনীতিক রিচার্ড নেফিউ বৈদেশিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি মোকাবিলায় কাজ করেন। গত ৫ জুলাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন তাকে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক নিযুক্ত করেন। রিচার্ড নেফিউ রোববার (৬ আগস্ট) তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসেই দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এদিন সকালে তিনি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিকেলে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। আজ মঙ্গলবার ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন।
মন্তব্য করুন