সংবাদ, মতামত, অনুষ্ঠান ও ব্যবস্থাপনাসহ গণমাধ্যমের সার্বিক কাঠামোতে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে আরও সংবেদনশীল নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীসহ গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কোর সহায়তায় গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিষয়ক উন্নয়ন সংগঠন সমষ্টির আয়োজনে রাজধানীর একটি হোটেলে ডিজেবিলিটি ইকুয়ালিটি ইন দ্য মিডিয়া শীর্ষক আলোচনায় গণমাধ্যম কর্মীরা এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেন।
বক্তারা বলেছেন, কিছু গণমাধ্যম এরই মধ্যে এ বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিলেও সার্বিকভাবে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনায় এখনো তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য গণমাধ্যম ও সেগুলোর আধেয় ব্যবস্থাপনায় এ বিষয়ে আরও বেশি সংবেদনশীলতা তৈরি, নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সক্ষমতা উন্নয়নের সুপারিশ করেছেন তারা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সমষ্টির নির্বাহী পরিচালক মীর মাসরুরুজ্জামান। ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সেক্টর লিড নূর ই জান্নাত প্রমা গণমাধ্যম কাঠামোতে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি আরও শক্তিশালীভাবে অন্তর্ভুক্ত করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, “সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এর ফলে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি এখনো অনেকটা নেতিবাচক বিষয় হিসেবে থেকে গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ বিষয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগ থাকলেও গণমাধ্যমসহ করপোরেট খাতে এ নিয়ে কাঙ্ক্ষিত সংবেদনশীলতা তৈরি হয়নি। তাই গণমাধ্যমে বিদ্যমান ঘাটতি চিহ্নিত করে অগ্রগতির জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হেড অব ডিজিটাল জাহিদ নেওয়াজ খান বলেন, ‘গণমাধ্যম আগে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক আধেয়র ক্ষেত্রে সম্মানজনক শব্দ চয়নে তেমন নজর দিত না, এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে আগের তুলনায় সতর্কতা বেড়েছে।’ মীর মাসরুরুজ্জামান বলেন, সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষগুলোকে মূল ধারায় নিয়ে আসা।
গণমাধ্যম কর্মীরা প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক সংবাদ সম্পর্কে তাদের পর্যবেক্ষণগুলোও তুলে ধরেন। তারা বলেন, গণমাধ্যমে ব্যবসা কাঠামোতে সামাজিক ইস্যুগুলোর চেয়ে রাজনীতি ও কিছু গতানুগতিক বিষয়ের সংবাদ বেশি প্রাধান্য পায়। প্রতিবন্ধিতার মতো সামাজিক বিষয়ে এখনো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দিবসকেন্দ্রিক সংবাদ পরিবেশন করা হয়। কিছু ব্যতিক্রম বাদে এটি এখনো নিয়মিত বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি। গণমাধ্যমের নীতিমালা ও চর্চায় বিষয়টির আরও ইতিবাচক প্রতিফলন দরকার বলে মনে করেন তারা।
গণমাধ্যম কর্মীরা বলেন, প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে ভালো তথ্যায়ন ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় এ বিষয়ে সংবাদ তৈরিও অনেক চ্যালেঞ্জিং। তারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গণমাধ্যমে নিয়োগের জন্য অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রাখা, এ বিষয়ে অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আধেয় তৈরি, গণমাধ্যমের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সংবেদনশীলতা সৃষ্টি, রিপোর্টারদের দক্ষতা উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে গণমাধ্যম আধেয় পড়তে-দেখতে-শুনতে পারেন তার জন্য প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর জোর দেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার জামাল রেজা, চ্যানেল আই অনলাইনের আউটপুট এডিটর রোকন রহমান, প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক পার্থ শংকর সাহা, ভিউজ বাংলাদেশের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক কামরুন নাহার, কালবেলার সিনিয়র রিপোর্টার রীতা ভৌমিক, জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার স্বপ্না চক্রবর্তী, আরটিভির সিনিয়র রিপোর্টার আতিকা রহমান, একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার তানিয়া রহমান, ডেইলি স্টারের স্টাফ রিপোর্টার নীলিমা জাহান, এনটিভির সহকারী প্রযোজক জোবায়ের মিলন, কালের কণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার সজীব আহমেদ, আমাদের সময়ের সিনিয়র রিপোর্টার আফিয়া আফরীন, জাগো নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার মাসুদ রানাসহ অন্যরা।
মন্তব্য করুন