কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শেখ হাসিনার নতুন ফোনালাপ ফাঁস, যা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার পর একবার বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো নিদের্শনা পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি শেখ হাসিনার ‘কণ্ঠে’ বেশ কয়েকটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। রোববার (২৭ অক্টোবর) রাত থেকে তিন মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপ নিয়ে আলোচনার শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে সোমবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অডিও রেকর্ড না দেখে, শুনে বলতে পারব না। ডিপ ফেকের মাধ্যমে অনেক সময় কণ্ঠ নকল করা যায়।

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকার এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। সরকার শুধু ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সে সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।

ফাঁস হওয়া নতুন এই ফোনালাপে শেখ হাসিনার কণ্ঠের মতো একজনকে বলতে শোনা গেছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তোমাদের বাড়িঘরে যারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, তাদের বাড়িঘর নেই? সব কথা কী বলে দিতে হয়? বর্তমানে এই সরকারকে মানুষ ব্যর্থতার চোখে দেখছে।

ফোনালাপের অন্য প্রান্তের কণ্ঠটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুলের বলে জানা গেছে। তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন তা জানা যায়নি।

তবে এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি মো. বুলবুল বলেন, ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি শাকিল আলম বুলবুলের। বুলবুলসহ সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ দুজনই এখনো আত্মগোপনে আছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। তাদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযানো চালানো হচ্ছে।

ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এখন বেশি বাড়াবাড়ি করছে। দেখ, ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই শত্রুরা টিকে কি না। কাউকে পালাতেও দেওয়া হবে না।’

এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) বলেন, জি নেত্রী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কথায় আমরা ভরসা রাখছি।

শেখ হাসিনা বলেন, একদম একদম।

তখন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আপনি একটু মাথা ঠান্ডা রেখে আপনার কৌশলে এগিয়ে যান নেত্রী। তবে সবাইকে সব কাজ বরাদ্দ রেখে।

শেখ হাসিনা বলেন, ঠিক আছে, আমি সবাইকে বলছি, তোমরা শুধু দুই মাস অপেক্ষা কর। কিছু বলো না।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি নেত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ওরা ফেল করবে, আর আমরা যদি কিছু করি, তখন বলবে আমাদের জন্য করতে পারে নাই। সেটা আর বলার মুখ নেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও ইউনূসের গুটি গুটি চেহারা...।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি নেত্রী, অলরেডি বাংলার মানুষ বুঝে গেছে। মানুষ ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছে না।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এখন ওদের ভয় দিতে হবে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি নেত্রী, ওই যে আমাদের গোবিন্দগঞ্জের কালাম ভাই এমপি আর আমি উপজেলার চেয়ারম্যান বর্তমান ছিলাম নেত্রী, আর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরপর ছিলাম দুবার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। ওনার বাড়ি-গাড়ি সব জ্বালিয়ে দিছে। আমারও বাড়ি-গাড়ি পুড়িয়ে দিছে নেত্রী। আমাদের অসংখ্যা মামলা দিয়েছে, আপনি শুধু আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, না আমি একটা কথা বলি, তোমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিছে কে?

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ওরাই নেত্রী, জামায়াত-বিএনপি সবাই।

শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ঘরবাড়ি নেই?

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে, সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি না, না নেত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের নাই, তাহলে কারো ঘরবাড়ি থাকবে না।’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, একটা সংশয় নেত্রী, গোবিন্দগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সেক্রেটারি, তাদের নামে একটি মামলাও হয়নি। কিংবা তাদের বাড়িঘরেও ওরা যায়নি। ওরা কীভাবে টিকল?

শেখ হাসিনা বলেন, শোনো ওরা দেখে যেগুলো পোটেনশিয়াল, যেগুলো দেখে একেবারেই শক্ত তাদের ওরা তালিকা করে। সবাইকে কাউন্ট করে না। সে জন্য বললাম, যাদের বাড়িঘর পোড়া গেছে, তাদের হিসাব নেওয়া হচ্ছে, কারা পোড়াতে আসছিল, আর আমার বাড়ি যদি পুড়ে তাদেরও পুড়বে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি নেত্রী, জি নেত্রী আলহামদুলিল্লাহ। আপনার সঙ্গে কথা বলে বুকটা ভরে গেল নেত্রী। আপনি ভালো থাকবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মামলা, আমারত শুধু গোবিন্দগঞ্জ না, সারা দেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। আমি বলছি, সবাই তালিকা কর। তোমরাও তালিকা কর। ২২৭ মার্ডারের লাইন্সেস পেয়ে গেছি। এক মামলায় যে শাস্তি, সোয়া ২০০ মামলায় একই শাস্তি। তাই না। ঠিক আছে সেই শাস্তি নেব। তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেব। এটা যেন মাথায় থাকে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ইনশাআল্লাহ, ইনশাআল্লাহ।

শেখ হাসিনা বলেন, এবার একবার আসতে পারলে কেউ ফেলাইতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।

জানা গেছে, শাকিল আলম বুলবুল ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন সন্ত্রাসী। হত্যা, গুম, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে পারদর্শী হওয়ায় সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ তাকে সহজেই কাছে টেনে নেন। তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানান। চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি ধর্মীয় কাজের নামে সরকারি বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের মামলায় আসামি হন।

আবুল কালাম আজাদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধানের নেতৃত্বে উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৬ সালে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও তিন সাঁওতালকে হত্যা করেন শাকিল আলম বুলবুল। সাঁওতাল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ৯০ নম্বর আসামিও শাকিল আলম বুলবুল।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এসিআইয়ে চাকরির সুযোগ

শিক্ষক সুজন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৩

নড়াইলে ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা

অভিজ্ঞতা ছাড়াই স্নাতক পাসে চাকরি দিচ্ছে ইস্টার্ন ব্যাংক

সাতক্ষীরায় বেধড়ক পিটুনিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নিহত

রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ভ্রমণের দুয়ার খুলছে

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে অর্থ আদায়

মার্কিন নির্বাচনের খরচ কত, কে দেয়?

ক্ষুধা লাগলে বিদ্যুৎ খান তিনি

‘২৮ অক্টোবর দেশে ফ্যাসিবাদের সূচনা করেছে আ.লীগ’

১০

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা

১১

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১২

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

১৩

৩০ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৪

চট্টগ্রামে জুস কারখানায় আগুন

১৫

গুম কমিশনে অভিযোগ করলেন ব্যারিস্টার আরমান

১৬

জাগপার নতুন সভাপতি লুৎফর, সম্পাদক রিয়াজ

১৭

সংস্কার খুব ধীরগতিতে চলছে : লায়ন ফারুক

১৮

নোয়াখালীতে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির সংঘর্ষ, আহত ৬

১৯

মাওলানা আব্দুল আলিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ ইমাম সমিতির শোক

২০
X