বাংলা একাডেমির নতুন সভাপতি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শারাবান তাহরা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ প্রজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে আগামী ৩ বছরের জন্য অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক আবুল কাসেম ফজলুল হককে বাংলা একাডেমির সভাপতি নিযুক্ত করেছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে যোগ দিতে পারেন বলে দৈনিক কালবেলাকে জানিয়েছেন তিনি।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বাংলা একাডেমিতে সেলিনা হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি একাডেমির সভাপতি পদে দায়িত্ব পাওয়া কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৭ অক্টোবর পদত্যাগ করেন।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকারের সময়কালে দেশে অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলা একাডেমির প্রতিও হয়তো সেই দৃষ্টিভঙ্গী সরকারের রয়েছে। কারণ বাংলা একাডেমি আমাদের জাতীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা এবং বই প্রকাশের একটা কেন্দ্র। যে উদ্দেশ্যে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই লক্ষ্য থেকে সরে বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের বিধি-বিধান পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন ধরে বাংলা একাডেমি চলেছে। কোনো সংকীর্ণ ধারায় না গিয়ে একটা সর্বজনীন বিভিন্ন ধারার মানুষদের নিয়ে বাংলা একাডেমি পরিচালনা করলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেটা সফল হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে দলাদলি রয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও সংকীর্ণতা রয়েছে। এ ব্যাপারে এখন সবারই সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের জাতি, রাষ্ট্র, জনজীবন সবার কল্যাণে যেন বাংলা একাডেমি কাজ করতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কার্যক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে তখন বোঝা যাবে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না।
বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক চিন্তক ফজলুল হক কালবেলাকে জানান, তিনি এখনো চিঠি হাতে পাননি। সম্ভবত তার দপ্তরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল সোমবার থেকে তিনি সভাপতি হিসেবে নিজ দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, আবুল কাসেম ফজলুল হকের জন্ম ১৯৪০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। পরে বাংলা বিভাগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জীবনের চার দশক অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতে সোচ্চার রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক তিনি। তার লেখা ২১টি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘মুক্তিসংগ্রাম’, ‘কালের যাত্রার ধ্বনি’, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন’, ‘নৈতিকতা: শ্রেয়োনীতি ও দুর্নীতি’, ‘যুগসংক্রান্তি ও নীতিজিজ্ঞাসা’, ‘মাও সেতুঙের জ্ঞানতত্ত্ব’, ‘রাজনীতি ও দর্শন’ ‘আশা-আকাঙ্ক্ষার সমর্থনে’, ‘বাঙলাদেশের রাজনীতিতে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা’, ‘অবক্ষয় ও উত্তরণ’, ‘রাজনীতি ও সংস্কৃতি : সম্ভাবনার নবদিগন্ত’, ‘রাষ্ট্রচিন্তায় বাংলাদেশ’।
মন্তব্য করুন