কার্যালয় ঘেরাও এবং দখল করার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, সমকাল ও দৈনিক কালবেলার প্রধান কার্যালয় ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকেই অফিসগুলোর সামনে ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এতে কোনো অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের আন্তরিকতার প্রশংসা করেছেন গণমাধ্যমকর্মী ও বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যম নিয়ে বিষোদ্গার ছড়ানো হয়। একই সঙ্গে একটি মহল দৈনিক কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মাকে টার্গেট করে অপপ্রচার শুরু করে।
ভুল তথ্যের ভিত্তিতে কালবেলা এবং প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক ও প্রকাশকের নামে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে তারা শুক্রবার বিকেল ৩টায় কালবেলা কার্যালয় ঘেরাও এবং দখলের হুমকি দেয়। হুমকি দেওয়া হয়েছিল প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও সমকালকেও।
হুমকির ঘটনায় গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট থানায় কালবেলার পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। একই সঙ্গে হুমকির বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র ও তথ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলে তারা নিরাপত্তায় ত্বরিত ব্যবস্থা নেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানানো হয়, সংবাদমাধ্যমে কোনো ধরনের আঘাত সরকার বরদাশত করবে না। সংবাদমাধ্যমকে হুমকিসহ প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের ঘোষণায় নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়।
এরপর টার্গেট করা গণমাধ্যমগুলোর কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় সরকার। সে অনুযায়ী শুক্রবার চারটি গণমাধ্যমেই কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর নিউমার্কেটে দৈনিক কালবেলা ভবন ও আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব, এপিবিএনসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে কালবেলা কার্যালয়ের সামনে রাখা হয় পুলিশের এপিসি ভ্যান ও জলকামান।
একই সঙ্গে কার্যালয়ের দুই পাশে ব্যারিকেড দিয়ে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করতে দেখা যায়। অনলাইনে ‘ঘেরাও’ গুজব দেখে দুপুরের পর বিক্ষিপ্তভাবে অপরিচিত কয়েকজন কালবেলা কার্যালয়ের সামনে এলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
সরকারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এবং গ্রহণ করা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। সরকারের এই পদক্ষেপে সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কালবেলার সংবাদকর্মী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
কালবেলার বিশেষ প্রতিনিধি ও ডেপুটি চিফ রিপোর্টার ইউসুফ আরেফিন বলেন, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দেশের প্রথম সারির কয়েকটি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ছড়ানো হচ্ছে। আমরা মনে করি, এমন অপপ্রচার বাংলাদেশের স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি নিয়ে বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তারা কালবেলাসহ অন্য গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এজন্য আমরা বর্তমান সরকারকে সাধুবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও কড়া বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে হামলা করে কিংবা হুমকি-ধমকি দিয়ে কেউ পার পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
এদিকে দিনভর ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নজরদারি ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মো. মাসুদ আলম। তার নেতৃত্বে রমনা জোনের এডিসি, এসি, নিউমার্কেট থানার ওসিসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন।
ডিসি মাসুদ আলম বলেন, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দৈনিক কালবেলা কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। ভবিষ্যতেও আমাদের নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
এ ছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সমকালের প্রধান প্রতিবেদক লোটন একরাম।
তিনি কালবেলাকে বলেন, সমকাল অফিস ও প্রেস এলাকায় শুক্রবার সকাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। তাদের গ্রহণ করা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও সমকালের নিরাপত্তা বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগেরউপকমিশনার মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান বলেন, তিন অফিসের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বৈঠক করে নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো বিশ্লেষণ করেছি। সে অনুযায়ী, অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে গণমাধ্যম অফিসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।
মন্তব্য করুন