উপকূলের আরও কাছে চলে এসেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। গতিবিধি অপরিবর্তিত থাকলে ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৬টার মধ্যে ভারতের উড়িষ্যার পুরী ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে দেশের দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি ঝরছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও উত্তর- উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১৮.৪° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি আজ সকাল ৬টায় (২৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৮৫ কিমি দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস আরও জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের উপর দিয়ে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতিভারি (≥ ৮৯ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিমি এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০৩ (তিন) নম্বর (পুনঃ) ০৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে, প্রবল বেগে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ ওড়িশা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামীকাল শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালে এটি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
আইএমডি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ শুক্রবার ভোরে ভিতরকানিকা ন্যাশনাল পার্ক এবং ধামরা বন্দরের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে। তবে এ প্রক্রিয়া বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে।
আইএমডির ডিজি মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। যার ফলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় ভারি বৃষ্টিপাত, বাতাস ও ঝড়ের গতি সর্বোচ্চ থাকবে। ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ স্থলভাগে আছড়ে পড়ার ফলে ২ মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসসহ রাজ্যটিতে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার মধ্যরাতেই সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। গত সাত ঘণ্টায় উপকূলের দিকে আরও ৯০ কিলোমিটার এগিয়েছে ‘দানা’। উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, সাগরদ্বীপ থেকে মাত্র ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড়টি। ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে এটি ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে ক্রমে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে ‘দানা’। অনুমান করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে এটি স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। ওড়িশার ভিতরকণিকা থেকে ধামারার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের ‘ল্যান্ডফল’ হবে। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় এর গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার গতি কখনো কখনো ১২০ কিলোমিটারও হতে পারে।
মন্তব্য করুন