শারদীয় দুর্গোৎসবের অষ্টমী তিথিতে ঢাকার গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে এবারও বড় পরিসরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাতৃশক্তির বন্দনা করে কুমারীরূপে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছেন বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় কুমারী পূজা, বেলা সাড়ে ১১টায় অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
রামকৃষ্ণ মিশনে এবারের পূজায় কুমারীরূপে দেবীর আসনে ছিল সংহিতা ভট্টাচার্য। ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া এই কুমারীর বয়স আট বছর হওয়ায় শাস্ত্রমতে নাম ‘কুব্জিকা’। ‘রামু কক্সবাজার’ স্কুলের কেজি শ্রেণিতে পড়ে সংহিতা।
পূজার আগে কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন লাল শাড়ি, গয়না, পায়ে আলতা, ফুলের মালা এবং অলঙ্কারে সাজানো হয় দেবীরূপে। পদ্মফুল হাতে দেবী পূজার আসনে বসার পর মন্ত্রপাঠ আর স্তুতিতে তার বন্দনা করা হয়।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ পূর্ণাত্মানন্দ বলেন, “কুমারী পূজা মাতৃভাবে ঈশ্বরেরই আরাধনা। কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন। দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমীতে সাধারণত ৫ থেকে ৮ বছরের একটি কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়।”
যে কোনো জাতের মেয়েকেই কুমারীরূপে পূজা করা যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তবে স্বত্বগুণসম্পন্না, শান্ত, পবিত্র, সত্যশীল এসব দৈবি সম্পদের অধিকারিণী কুমারীই জগজ্জননীর প্রতিমারূপে গ্রহণের বিধি আছে।”
শাস্ত্রমতে, মানববন্দনা, নারীর সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং ঈশ্বরের আরাধনাই কুমারী পূজার শিক্ষা। যে ত্রিশক্তিতে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি-স্থিতি ও লয়ের চক্রে আবর্তিত হচ্ছে, সেই শক্তি কুমারীতে বীজ আকারে আছে বলে বিশ্বাস করেন সনাতন ধর্মানুসারীরা। এই বিশ্বাসেই তারা কুমারীকে দেবীদুর্গা হিসেবে আরাধনা করেন।
পূর্ণাত্মানন্দ বলেন, কুমারী পূজা মাতৃভাবে ঈশ্বরেরই আরাধনা; কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন।
কুমারী পূজা উপলক্ষে সকাল থেকেই দেবীর ভক্তরা জড়ো হতে থাকেন রামকৃষ্ণ মিশনে। সকালে নবপত্রিকাস্নানসহ পূজার অন্যান্য রীতি পালনের পর সকাল সাড়ে ১০টায় যখন কুমারী পূজা শুরু হয়, তখন মণ্ডপের প্যান্ডেলে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর দেখা যায়।
ঢাকের বাদ্য, কাঁসার ঘণ্টা, শঙ্খের আওয়াজ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয় পূজা প্রাঙ্গণ, চলে ভক্তি গীতি। এছাড়া সকাল থেকেই দেবী দুর্গার আরাধনায় মণ্ডপে চলে পূজা আর চণ্ডীপাঠ।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভুজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই আগমন ও প্রস্থানের মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
এবার তিথির কারণে গত মঙ্গলবার দেবীর বোধন হয়েছে। পরদিন সকালে ষষ্ঠী পূজা এবং বৃহস্পতিবার নবপত্রিকায় প্রবেশ ও স্থাপনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসব। শুক্রবার সকালে কুমারী পূজার পাশাপাশি মহাঅষ্টমীর বিহিত পূজা এবং সন্ধিপূজাও হয়েছে।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অষ্টমীতে পূজা দিলে অষ্টমঙ্গল লাভ হয়। সংসারে এবং পরকালে শুভবার্তা আসে। এজন্যই অষ্টমীতে পূজা করা হয়। অনেক জায়গায় মাতৃশক্তির বন্দনা করে কুমারী পূজাও করা হয়।”
এ বছর দেবীদুর্গার আগমন হয়েছে দোলায় বা পালকিতে এবং দেবী কৈলাসে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়।
আগামীকাল শনিবার মহানবমী। পঞ্জিকা মতে, এবার মহানবমী পূজার পরই দশমীর বিহিত পূজাও হবে। তবে বিজয়া দশমী উদ্যাপন হবে রোববার এবং ওইদিন বিকালে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বিজয়ার শোভাযাত্রা বের করা হবে।
পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবার পূজা হচ্ছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, গত বছর হয়েছিল ২৪৮টিতে।
মন্তব্য করুন