বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের ভেতর থেকে প্রবাসী কল্যাণ ডেক্স অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবাসী কর্মীদের জন্য IOM-এর সহায়তায় প্রবাসী লাউঞ্জ স্থাপনের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
ইমিগ্রেশন ডেক্সে যেহেতু বিএমইটি বা ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের প্রতিনিধি রাখার প্রয়োজনীয়তা নেই বিধায় প্রবাসগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরে হয়রানি কমানোর জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নির্দেশে ইমিগ্রেশন হতে ৩টি প্রবাসী কল্যাণ বুথ অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গত ২৯ সেপ্টেম্বরের মন্ত্রণালয়ের সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবং ৬ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা প্রবাসী কল্যাণ ডেক্স পরিদর্শনকালে প্রবাসী কর্মীদের বিদেশ গমন এবং আগমন কালে বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সের সেবার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য ইমিগ্রেশন প্রবাসী কল্যাণ ডেক্স অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ ছাড়া জানা যায় এখন থেকে বিএমইটির সার্ভার কে ইমিগ্রেশনের সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে । যাতে করে প্রবাসী যাত্রীদের ভোগান্তি কমিয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিস এর মাধ্যমে বিদেশ যাত্রা সহজ করা যায়। উল্লেখ্য, উপদেষ্টার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে প্রবাসীদের সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে বিমানবন্দরস্ত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে একজন উপ-পরিচালক কে পদায়ন করা হয়। বিদ্যমান ২৫ জনবল বহাল রেখে নতুন করে আরও ১৪ জনকে প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সে পদায়ন করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিমানবন্দরের ভিতরে প্রবাসী কর্মীদের জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে IMO-এর সহায়তায় প্রবাসী লাউঞ্জ স্থাপনের কার্যক্রম চলমান আছে। প্রবাসীদের বোডিং কার্ড, ইমিগ্রেশন সহায়তা এবং আগমনী কর্মীদের লাগেজ প্রাপ্তিতে সহায়তা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দরে কর্মরত প্রতিটি কর্মীকে শনাক্তকরণের জন্য আইডি কার্ড, জ্যাকেট পরিধানে বাধ্যতামূলক করে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দরে প্রবেশ গেটসমূহে ২৪ ঘণ্টা প্রবাসীদের বিভিন্ন সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আই ও এম এর সহায়তায় ৬০ জন ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল হক কালবেলাকে বলেন, ২০১৮ সালে আইনপ্রণয়নের মাধ্যমে ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ড একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই বোর্ডের অধীনে প্রবাসী কল্যাণ ডেক্স পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ছয়টি ডেক্সের মাধ্যমে বহুমাত্রিক সেবা কার্যক্রম চলমান আছে এবং অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সেবা ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণে ২৪ ঘণ্টা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইমিগ্রেশনের ভিতর থেকে প্রবাসী কল্যাণ ডেক্স অপসারণের ফলে একদিকে যেমন যাত্রীদের সহজে বিদেশ গমনে ভোগান্তি কমবে অন্যদিকে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক যাত্রীদের বহুর্বিদ ও সেবা প্রদানে আরো মনোযোগী হয়ে কাজ করার সুযোগ পাবে। বিএমইটির সার্ভার ইমিগ্রেশনের সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় যাত্রীরা অল্প সময়েই বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারবে।
এ বিষয়ে অভিবাসী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির কালবেলাকে বলেন, ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন এসবি রয়েছে। এখন যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বি এম ই টি সার্ভারকে ইমিগ্রেশনের সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত করার ফলে চেক এন্ড ব্যালেন্স এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নতুন পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে নজরদারি রাখা প্রয়োজন রয়েছে। যাতে করে বিমানবন্দরে যাত্রীদের তথ্য নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে বিএমটি ও ইমিগ্রেশন ছাড়পত্রের মধ্যে সমন্বয়হীনতার দেখা না দেয়।
তিনি আরও বলেন, অবশ্যই যাত্রীদের ভোগান্তির কমানোর জন্য এই পদক্ষেপ কে সাধুবাদে জানাই। এর জন্য এস বি তে লোকবল বাড়াতে হবে এবং নজরদারি ও সমন্বয়ের উপরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর রাখা প্রয়োজন রয়েছে যাতে করে সমন্বয়হীনতার সুযোগ নিয়ে অবৈধ উপায়ে কেউ বহির্গমন করতে না পারে। তবে নতুন এই পদক্ষেপ কার্যকর করতে একটু সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। তবে প্রবাসীদের কল্যাণে অবশ্যই এই পদক্ষেপকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
মন্তব্য করুন