বিগত সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করলেও সেই নীতিমালা গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের (গৃহকর্মী) সুরক্ষা দিতে পারছে বলে মনে করেন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
একইসঙ্গে গৃহকর্মকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে দ্রুত গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন পাসের তাগিদ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) আয়োজিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারা।
অনুষ্ঠানে ঢাকা শহরে গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরতে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
এতে জানানো হয়, রাজধানীতে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের প্রায় ৫০ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়।
তার মধ্যে শারীরিক আঘাতের শিকার ১৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ, মারধরের শিকার ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ, বকাঝকার শিকার ২০ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার এক দশমিক ৭ শতাংশ।
এ ছাড়াও ৩১ দশমিক ৪৫ শতাংশ গৃহকর্মী অত্যাধিক কাজের চাপে থাকে বলে গবেষণার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এএসডির নির্বাহী কমিটির সভাপতি ড. আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. তরিকুল আলম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক ও শিশু অধিকার কমিটির সদস্য সচিব এম রবিউল ইসলাম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (স্বাস্থ্য) ডা. বিশ্বজিত রায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মোছা. সালমা আক্তার, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক এস এম এনামুল হক, এএসডি’র নির্বাহী পরিচালক এম এ করিম, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল প্রমুখ।
গবেষণা ফলাফল তুলে ধরেন এএসডির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইউ কে এম ফারহানা সুলতানা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. তরিকুল আলম বলেন, গৃহকর্মী শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। অনেক আগে থেকে শিশু শ্রমিক নির্যাতন চলে আসছে। তবে এটা সত্য আগের তুলনায় শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন অনেকাংশে কমে আসছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, এটা শতভাগ বন্ধ হোক। শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যে ৪৩টি কাজ চিহ্নিত করা আছে, তার সঙ্গে গৃহকর্মকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মানবাধিকার কমিশনের এম. রবিউল ইসলাম বলেন, গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষায় মানবাধিকার সবসময় সক্রিয় আছে। শিশু নির্যাতনের ঘটনা বন্ধে সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে কাজ চলছে। নীতিমালা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি আইন প্রণয়নে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে আইনের খসড়া প্রণয়ন হয়েছে। দ্রুতই তা চূড়ান্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষায় আইন ও নীতিমালা সংশোধনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাথে উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। গৃহকাজকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তাছাড়া বিদ্যমান নীতিমালা ও আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির করতে হবে। নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে। নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার শিশুদের স্বাস্থ্য ও আইনি সেবা প্রদান কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
মন্তব্য করুন