বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাভারে লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল কাফী পরিচয় গোপন করে একদিনে পাসপোর্ট নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক স্প্রেম্যান সুপারভাইজার পরিচয়ে পাসপোর্ট নেন। গত ১৫ আগস্ট অতি জরুরি ফি জমা দিয়ে আবেদন করে ওইদিনই তিনি সাধারণ পাসপোর্ট পেয়ে যান।
মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট (ডিআইপি) অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
ডিআইপি কর্মকর্তারা বলেন, স্প্রেম্যান সুপারভাইজারের চাকরি থেকে ইস্তফার জাল সনদ জমা দিয়ে কাফী পাসপোর্ট নেন। তবে বিষয়টি ২০ দিন পর অবগত হন আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি দ্রুতগতিতে ব্যবস্থা নেওয়ায় বিষয়টি ধরা পড়ে এবং ৮ সেপ্টেম্বর ভুয়া পরিচয়ে নেওয়া ওই পাসপোর্ট বাতিলের ব্যবস্থা নেন। এরই মধ্যে ভুয়া পরিচয়ে পাসপোর্ট দেওয়ার সঙ্গে জড়িত আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের ডিএডি জাহাঙ্গীর আলমকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এটিএম আবু আসাদ বলেন, অফিসিয়াল পাসপোর্টধারী (সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী) সেবা দেওয়ার জন্য আগারগাঁও অফিসে নির্ধারিত ১০১ নম্বর কাউন্টার ও সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তা রয়েছেন। আব্দুল্লাহহিল কাফী অফিসিয়াল পাসপোর্টধারী হয়েও ওই কাউন্টারে না গিয়ে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ১০৩ নম্বর কাউন্টারে কর্মরত ডিএডি জাহাঙ্গীর আলমের কাছে আবেদনপত্র হার্ডকপি জমা দেন। পাসপোর্টের এ কর্মকর্তা ই-পাসপোর্টের ইন্টারভিউ মডিউলেও ওই আবেদন জমার অনুমোদন দেন। আবেদনপত্র প্রক্রিয়াকরণ শেষে পাসপোর্ট প্রিন্টিংয়ের জন্য তিনি অনলাইনে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। যেহেতু তিনি পাসপোর্টের আবেদনপত্রটি সুপার এক্সপ্রেস ফি দিয়ে জমা করেন, সেহেতু তিনি একই দিনে পাসপোর্টটি পেয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাসপোর্ট ইস্যুর প্রায় ২০ দিন পর ৪ সেপ্টেম্বর কাফীর নামে একটি সাধারণ পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে বলে উপপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন জানতে পারেন। এরপর তিনি নথি যাচাই করে দেখতে পান- আবেদনকারী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্প্রেম্যান সুপারভাইজার পদ থেকে চাকরি থেকে ইস্তফাপত্রের একটি জাল প্রমাণক পাসপোর্টের আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা করেন। এরপরই উপপরিচালক ওই পাসপোর্টটি ইস্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাথমিক পরিচয় নিশ্চিত করেন এবং কাফীর আবেদনপত্র জমা গ্রহণকারী ডিএডি জাহাঙ্গীর আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। পাশাপাশি বিষয়টি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়কে অবহিত করে সে পাসপোর্টটি বাতিলের অনুরোধ করে চিঠি দেন। সে অনুযায়ী ৮ সেপ্টেম্বর সেই পাসপোর্ট বাতিল আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে ওই পাসপোর্ট বাতিল আদেশ পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও কাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভুয়া পরিচয়ে নেওয়া ওই সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করেই দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাফী। গত ৩ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি। এরই মধ্যে তাকে পুলিশবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন