জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গত ৫ আগস্ট পরবর্তী চলমান সাম্প্রদায়িক-জাতিগত সহিংসতার তদন্তসহ একাধিক দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
রোববার (০৬ অক্টোবর) সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি দেন সংগঠনের নেতারা। অন্য দাবিগুলো হচ্ছে- সাম্প্রদায়িক সহিংসতার চির অবসান, সংখ্যালঘুদের ৮ দফা বাস্তবায়ন এবং মানবাধিকার নেতা অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা।
ঢাকায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটির পক্ষ থেকে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি অতুল চন্দ্র মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক হৃদয় চন্দ্র গুপ্ত; দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাবুল দাস, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চন্দন ভৌমিকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, মানিকগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, নেত্রকোনা, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চাঁদপুর, খুলনা, গাইবান্ধা, শরীয়তপুর, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়।
স্মারকলিপিতে শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে অব্যাহতভাবে প্রতিমা ভাঙচুর, নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উসকানি এবং বিশেষ মহল কর্তৃক সার্বজনীন দুর্গাপূজার তীব্র বিরোধিতায় কথিত ১৬ দফা দাবি এবং ভারত বিরোধিতার নামে হিন্দু বিরোধিতাকে রাজনীতির উপজীব্য করে তোলার ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এ ছাড়া গত ৫ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের দিঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রতিককালে সংঘটিত জাতিগত সহিংসতার চালচিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক-জাতিগত সহিংসতায় নিহত পরিবার ও আহতদের চিকিৎসার জন্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ, ক্ষতিগ্রস্ত উপাসনালয় পুনঃসংস্কার বা পুনঃনির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারী, উসকানিদাতা ও সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার, দেশব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজা শাস্ত্রীয় পরিবেশে অনুষ্ঠানে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ কামনা করা হয়।
স্মারকলিপিতে মানবাধিকার নেতা অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে ঢাকার দুটি থানায় রুজুকৃত হত্যা মামলাকে ‘মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক’ উল্লেখ করে সারা দেশে সংখ্যালঘু নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের নিমিত্তে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আহ্বান জানানো হয়।
মন্তব্য করুন