দেশে বন্যা হওয়ার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে অতিবৃষ্টি, আগাম সতর্কতা না দিয়ে উজান থেকে পানি ছেড়ে দেওয়া, খাল-বিল ভরাট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানের বাঁধগুলো নির্মাণের পর থেকে দীর্ঘসময় ধরে মেরামত না করা বন্যার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে।’
রোববার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘কপ নেটওয়ার্ক কনভেনশন-২০২৪’ এর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি দীর্ঘস্থায়ী বিষয়ে কথা বলেন- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপ এবং উজানের দেশগুলোর সঙ্গে বন্যা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় অথবা জলোচ্ছ্বাস সংক্রান্ত অভিন্ন জলরাশি বিষয়সহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছাতে পারিনি। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যা হওয়ার তা তো হবেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। যেটা আমাদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জ। কারণ, আমাদের অতটা রিসোর্স অথবা টেকনিক্যাল জ্ঞান নেই। সে কারণে আমরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে লস অ্যান্ড ড্যামেজসহ অন্যান্য ফান্ডে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রকে পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রভাব থেকে বাঁচতে আঞ্চলিক পর্যায়েও সহযোগিতা বাড়ানো দরকার। কারণ, কী পরিমাণ বৃষ্টিপাত উজানে হচ্ছে, কখন পানি ছেড়ে দেওয়া হবে, এগুলোর ওপর আগাম সতর্কতার বিষয়ে সমঝোতা না থাকলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এর প্রভাব মোকাবিলা কষ্টকর হয়ে যাবে।’ এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চাইলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল এবং আঞ্চলিক পর্যায় দুটিই গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এবারের বন্যার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে অতিবৃষ্টি, উজান থেকে পানি ছেড়ে দেওয়া, আগাম সতর্কতা না থাকা বন্যার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে দেশের আবহাওয়ায় একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। যার কারণে গরম, শীত, বৃষ্টি, বন্যা যা হচ্ছে সেটিই চরমভাবে হচ্ছে। এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে যেমন দোষ দেই তেমনি একই সঙ্গে অভিন্ন জলরাশির ব্যাপারে সমঝোতা না থাকাও বড় কারণ।’ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘিরে খাদ্যসংকট রয়েছে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্যায় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে খাদ্যঘাটতি না হয়, সে জন্য দেশের বাজারকে প্রস্তুত রাখতে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। যদিও সরকারের সামর্থ্য কম। কিন্তু সরকার এটা নিশ্চিত করবে যেন খাবার এবং জ্বালানিতে কোনো ঘাটতি না হয়।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মাটির নিচ থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা তুলছি। ফলে পৃথিবীতে কার্বন গ্যাস বেড়ে গেছে। গাছ অক্সিজেন দেয় এবং কার্বন শোষণ করে নেয়। কিন্তু আমরা গাছ কেটে ফেলছি। তখনো কিন্তু কার্বন গ্যাস বেড়ে যাচ্ছে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। এমন একটি উন্নয়নের দর্শন বা মতবাদকে আমরা আপন করে নিয়েছি, যা থেকে বের হতে না পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে আমরা বাঁচতে পারব না।’
বন্যাপরবর্তী সময়ে ফসলের বীজের সংকট সামনে এসেছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্যাপরবর্তী সময়ে ফসলের বীজ পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু ঘরে ঘরে বীজ সংরক্ষণ করা গেলে সরকারকে বীজের সংকটের মধ্যে পড়তে হতো না। কিন্তু আমরা নিজেরা বীজ সংরক্ষণ না করে সব দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছি কোম্পানির হাতে।’ অনেক উন্নত দেশই জলবায়ু পরিবর্তনে ভুক্তভোগী দেশগুলোকে যে পরিমাণ টাকা দেওয়ার কথা তার ধারে কাছেও যায় না বলেও জানান তিনি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সভাপতিত্বের অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- সুইডেন অ্যাম্বাসির হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন মারিয়া স্ট্রিডসম্যান ও ইউএন উইমেন রিপ্রেজেনটেটিভ বাংলাদেশ গীতাঞ্জলি সিং। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে জলবায়ু অভিযোজনে নিজ নিজ এলাকায় অবদান রাখার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাঁচ নারীকে সম্মাননা জানানো হয়।
মন্তব্য করুন