রাজধানীর দক্ষিণখান ও বিমানবন্দর এলাকার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন জাকির (৪২) এবং আব্দুল হান্নান (৪৮)। রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি দুজনেই জমির দালাল ও জাল দলিলকারক হিসাবে পরিচিত। রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে এই মানিকজোড়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলাউদ্দিন সরকার টিপু সঙ্গে একইমঞ্চে এই দুই ব্যক্তির উপস্থিতি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমির দালালি ও জাল দলিল বানিয়ে ব্যবসা করেন দক্ষিণখান কাওলা এলাকার বাসিন্দা এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জাকির ও হান্নান। জমি দখল, জাল দলিল বানিয়ে বিক্রি ইত্যাদি অপকর্মের মাধ্যমে বিগত ১৬ বছরে দুজনেই হাতিয়ে নিয়েছেন। চক্রটির ফাঁদে বহু লোক সর্বস্বান্ত হয়েছেন। দক্ষিণ খান, তিনশ’ফিট, পূর্বাচল এবং ভাটারা এলাকায় এদেরকে ভূমিদস্যু হিসেবে চেনেন। তাছাড়া এ দুজনেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় কমিশনার আনিসুর রহমান নাঈম এবং ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসানের ক্যাডার বাহিনীর অন্যতম সদস্য হিসাবে পরিচিত।
কিন্তু সরকার পরির্তনের সঙ্গে সঙ্গেই ভোল পাল্টে ফেলেন জাকির ও হান্নান। এরইমধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্রহত্যার অভিযোগে এদের বিরুদ্ধে গত ২৩ আগস্ট বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের হয়। ফলে গ্রেপ্তার এড়িয়ে নিজেদের প্রভাব ও জমির ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বিএনপিতে ঢুকে পড়েছেন দুজন।
সম্প্রতি দক্ষিণখান থানা বিএনপির একটি আলোচনা সভায় মঞ্চে বিএনপি নেতাদের পাশে বসে বক্তব্য দেন তারা। এতে দক্ষিণখান এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়।
এ বিষয়ে দক্ষিণখান বিএনপির নেতা এবং উল্লিখিত দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার প্রধান অতিথি এ আলাউদ্দিন সরকার টিপু জানান, তিনি ১৭ বছর পর এলাকায় এসেছেন। যে কারণে অনেককে চেনেন না। এ জন্য তার অজান্তে ওই সভায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য জাকির ও হান্নান বিএনপি সেজে উপস্থিত হতে পেরেছেন।
প্রসঙ্গত, জাকির ও হান্নাকে নিয়ে কর্মসূচি পালন করায় বিএনপির পক্ষ থেকে টিপুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, আলাউদ্দিন সরকার টিপু ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা হয়েও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নৈতিকতা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় একই মঞ্চে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বসিয়ে বক্তৃতা করিয়েছেন, যা স্থিরচিত্রসহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। সুতরাং এহেন দলীয় শৃঙ্খলা চরম লঙ্ঘনের দায়ে কেন আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী আজিজুল হক নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগে তিনি লিখেছেন, ‘বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলাউদ্দিন সরকার টিপুর কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন উত্তরা, বিমানবন্দর ও দক্ষিণখানের বাসিন্দারা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তার চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাত্রা বেড়েই চলছে। তার হাত ধরেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে।’
মন্তব্য করুন