গণবুদ্ধিজীবী ও শিক্ষক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ১৯৭২ সালের প্রণীত সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো প্রতিফলন হয়নি।
শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় ‘সংস্কৃতি বাংলা’র আয়োজনে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে ‘বৈচিত্র্যে বহুত্বে বাংলার সংস্কৃতি : গ্যাঁড়াকল ও পরিত্রাণ’ শীর্ষক প্রথম পর্ব আলোচনায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে ড. সলিমুল্লাহ খান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা বাদশা আকবরের আমলে চলে গেছি। কারণ এখানে সব ধর্মের ধর্মগুরুদের সমন্বয় ঘটেছে। কারণ আকবর সব ধর্মের কথা শুনতেন। তিনি সবার সঙ্গে শান্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করা হয়। ব্রিটিশ ইতিহাসে আমাদের যে লড়াই তা আমাদের নিচের ক্লাসে পড়ানো হয় না। আকবর তুর্ক হিসেবে এদেশে এসে শান্তির বাণী ছড়িয়েছেন।
আলোচকদের মধ্যে ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাদার তপন ক্যামিলাস ডি’রোজারিও। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সন্ন্যাসী স্বামী দেবধ্যানানন্দ, উত্তরা বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ মুদিতা পাল থের, আদিবাসী নেতা ও মানবাধিকারকর্মী লেখক ইলিরা দেওয়ান এবং টঙ্গীর আন-নূর জামে মসজিদের খতিব শায়খ আলী হাসান তৈয়ব। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি ও সমালোচক সোহেল হাসান গালিব এবং ধারণাপত্র পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাসউদ ইমরান।
অধ্যাপক মাসউদ ইমরান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বেশ কিছু প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। অনেকে বলছে, এটা একটা নতুন বাংলাদেশ বা আবারও স্বাধীনতা অর্জন বা চেতনা-রাজনীতি-মুক্ত দেশ বা জাতীয়তাবাদী রাজনীতি-মুক্ত বাংলাদেশ বা সবার অংশগ্রহণমূলক বাংলাদেশ। অর্থাৎ সব মত-পথের অংশগ্রহণের বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, তাহলে কেন বাংলাদেশের সব অংশীজনের সংস্কৃতিকে একাঙ্গীকরণে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলা হচ্ছে। এ জনযুদ্ধ তার আগের যে রাজনৈতিক প্রকল্পকে অস্বীকার করে তা রাজনৈতিকভাবে একাঙ্গীকরণের ব্যর্থতার কারণে। এই একাঙ্গীকরণ হলো ‘আত্তীকরণ’ এবং ‘বাসস্থান’। এই একাঙ্গীকরণে ধর্মনির্ভর মুসলিম জাতীয়তাবাদ এবং ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ মোটা দাগে একে অপরকে খারিজ করে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছে। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি অপরাপর জাতি-সত্তাকে নিয়ে ভেবেছে?
অধ্যাপক ড. ফাদার তপন ক্যামিলাস ডি’রোজারিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়ের পর শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতির ইতিবাচক-নেতিবাচক পট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইতিবাচক গ্রাফিতিতে লেখা হয়েছে, আমরা সবাই মানুষ, ধর্ম আমাদের পরিচয়ের অংশ মাত্র, বাংলাদেশের সংস্কৃতি আমাদের সবার- এটি সত্য। নেতিবাচকভাবে বলা হয়েছে, একটা জাতি একটা বিশ্বাস, পিওর বেঙ্গল পিওর ব্লাড।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সেক্যুলিজমকে সমর্থন করব, নাকি ভাষাভিত্তিক পরিচয়কে সমর্থন করব। নাকি আরও অধিক ধর্মীয় সংজ্ঞায়িত রাষ্ট্রের দিকে নিজেরা প্রবাহিত হবো?
স্বামী দেবধ্যানানন্দ বলেন, আমাদের সংস্কৃতি বাংলায় যে বৈচিত্র্যময় মানুষ রয়েছি, সবাই কীভাবে একত্রিত হয়ে থাকতে পারি। তাহলো একত্বকে দর্শন করা। একত্বকে বোঝা, জানাই মানবতা। এই মানবতা বোধে, মানবতার ঐক্যে যদি আমরা পৌঁছুতে পারি, তাহলে আমাদের বৈচিত্র্যকে ‘আত্তীকরণ’ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক ধর্মেই আদর্শ রয়েছে। আদর্শ যদি আমরা ঠিক করতে পারি, তাহলে আমাদের পথচলা মসৃণ হবে। নইলে আমরা বিভ্রান্ত হবো। মাস দুয়েকের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে, প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। নবীজীকে নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে। এই সাম্প্রদায়িকতা থেকে সংস্কৃতি বাংলা আমাদের অন্ধকার থেকে অসাম্প্রদায়িকতার আলোর দিকে ধাবিত করেছে।
মন্তব্য করুন