আশ্বিনের মাঝামাঝিতে চলা বৃষ্টির প্রবণতা সপ্তাহজুড়েই থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের পাঁচ বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। ভারি বৃষ্টির ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন অংশে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায়ও ঝুম বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় বজ্রপাত। রাতভর চলা বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতাও তৈরি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে চট্টগ্রামে। এ ছাড়া কক্সবাজারে ১১৪, নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে ১০৮ ও ঢাকায় ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এ দিকে ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, বঙ্গোপসাগরে আগামী ২৪ ঘণ্টায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে শুক্রবারও দেশের সবখানে বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরপর পরশু (শনিবার) থেকে বৃষ্টিপাত কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ দিকে দেশের পাঁচ বিভাগে দুইদিনের ভারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ার এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। ভারি বৃষ্টির ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বস হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয় ওই বার্তায়।
আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমার আভাস এসেছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে৷
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে দেশের দুই বিভাগে নদীর পানি বাড়ছে। তবে তাতে আকস্মিক বন্যা বা বিপদের শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মেহদী হাসান বলেন, দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সিলেটে আরও একদিন এবং চট্টগ্রামে আরও দুদিন পানি বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা সিলেট বিভাগ ও এর উজানে ভারি বৃষ্টির কারণে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়বে, তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
আর সারিগোয়াইন, খোয়াই, কংস, ভুগাই ও ধলাই নদীর পানি কমছে। অন্যদিকে যাদুকাটা, মনু ও সোমেশ্বরী নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা এসব নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে।
বুলেটিনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, সাঙ্গু, গোমতী, মুহুরী, মাতামুহুরী ও হালদা নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২ দিন চট্টগ্রাম বিভাগ ও এর সংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাতে করে এসব নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে।
মন্তব্য করুন