আবারও আলোচনায় এসেছেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী। নির্বাচন কমিশন সংস্কারে গঠিত সংস্কার কমিশনকে কেন্দ্র করে তার নাম উঠে এসেছে। কমিশনে জায়গা পেতে সংস্কার কমিশনের প্রধান ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের নানা মহলে যোগাযোগ রক্ষা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হলের সাবেক এই ছাত্রলীগ নেত্রী। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন ছাড়াও রাজনৈতিক অঙ্গনে এক আলোচিত নাম জেসমিন টুলী। একসময় রোকেয়া হলের তুখোড় ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে মাঠে সক্রিয় ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদের নিরপেক্ষ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন উপসচিব জেসমিন টুলীর বিরুদ্ধে।
ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, বগুড়ার হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, মেজর মান্নানসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ভৌতিক ভোটার তালিকা এবং ভোটকেন্দ্রের নথি তিনি গায়েব করে দেন বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ বিএনপির। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নির্দেশে সেগুলো জেসমিন টুলীর অফিস রুমের বারান্দার ড্রয়ার থেকে উদ্ধার করা হয়। এমনকি এহসানুল হক মিলনের ক্লাসমেট বলে বিভিন্ন সময় পরিচয় দেওয়া এই জেসমিন টুলীই মিলনের আমেরিকার নাগরিকত্ব পরিত্যাগপত্রের ফাইলটি গায়েব করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৫ সালে বিএনপির সময়ে নিয়োগকৃত ৮৫ জন উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বিএনপি কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। এর পেছনে পরোক্ষভাবে কাজ করেন ইসির তৎকালীন এই কর্মকর্তা। ২০০৮ সালে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পরাজয়ের জন্য জেসমিন টুলীর প্ররোচনায় তাদের নির্বাচনী এলাকাগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ পুনর্বিন্যাসকে দায়ী করা হয়।
২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে বিএনপি যাতে অংশগ্রহণ না করে, সেজন্য নির্বাচনী শিডিউল পেছানোর সুযোগ থাকার পরও তা না করে একতরফা নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য জাতীয় পার্টি প্রত্যাহারপত্র জমা দিলেও নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে রিটার্নিং অফিসারদের তা গ্রহণ না করতে এই জেসমিন টুলী নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বড় কৃতিত্ব দেওয়া হয় এই কর্মকর্তাকে। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সিনিয়রকে পাশ কাটিয়ে তার পদোন্নতি দেওয়ার ব্যবস্থা করে। চাকরিজীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জেসমিন টুলী আওয়ামী লীগকে সহযোগিতার মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
ইসির একাধিক সূত্র জানায়, অবসর গ্রহণের পর এই কর্মকর্তা নতুনভাবে খোলস পাল্টে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সক্রিয় রয়েছেন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনে সম্পৃক্ত থাকতে কমিশন চেয়ারম্যানসহ অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি। এ চেষ্টা সফল হলে তা সরকার ও ছাত্র-জনতার বিপ্লবের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও রাজনীতিকরা।
মন্তব্য করুন