শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বাসস
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গেলেন মিছিলে, ফিরলেন লাশ হয়ে

জুলাই বিপ্লবের ছবি
জুলাই বিপ্লবের ছবি

‘যাচ্ছি মিছিলে যদি বেঁচে থাকি তাহলে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আগে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই কথাই বলেছিলেন সুমন। তিনি নিজেও জানতেন না, আর কোনোদিনই তার ফেরা হবে না। জানতেন না এটিই হবে তার ফেসবুকে শেষ স্ট্যাটাস।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিতে গত ৪ আগস্ট সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান মাগুরার মহম্মদপুর আদর্শ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র সুমন (১৯)। আন্দোলনের সময় মহম্মদপুর থানার সামনে সুমনের বুকে, হাতে ও পায়ে গুলি লাগে। তিনি শহীদ হন।

মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা কানুর রহমান ও মোছা. খাদিজা দম্পতির পুত্র সুমন। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সুমন সবার বড়। সুমনের বাবা একজন বর্গাচাষী ও দিনমজুর। হতদরিদ্র পরিবারে অভাব অনটনের সংসারে থেকেও সুমনের স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া করে চাকরি করবে। সংসারের অভাব দূর করবে। ভাইবোনদের পড়ালেখা করাবে। দেশে চাকরি না পেলে পরিবারের জন্য বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিলো সুমনের। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে কুঁড়িতেই ঝরে গেলো তাজা প্রাণ। ভেঙ্গে গেলো পরিবারের স্বচ্ছলতার স্বপ্ন। ভাই-বোনদের লেখাপড়ার আশা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৪ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে মহম্মদপুর আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করে। এতে সুমন যোগ দেন। সেখানে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ কয়েকজন ছাত্রকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনতে গেলে থানার সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে সুমনের বুকে, হাতে ও পায়ে গুলি লাগে। সুমনের বন্ধু আসাদ সুমনের পরিবারকে ফোন করে তার আহত হওয়ার খবর জানায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পথে সুমনের মৃত্যু হয়। পরে তারাই সুমনকে নিয়ে তার বাড়িতে এসে পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করে। সেদিনই স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শহীদ সুমনের বাবা কানুর রহমান বলেন, বালিদিয়া সরকারি উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পড়া শেষ করে বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে সুমন। পরে মহম্মদপুর আদর্শ টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ছিল। সুমন আমাদের বলেছিল সে আন্দোলনে যাবে। কিন্তু আমরা পরিবারের সবাই তাকে আন্দোলনে যেতে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম আমরা গরিব মানুষ, আমরা আন্দোলন বুঝি না। তোমার কোন সরকারি চাকরি হবে না। আমাদের পরের জমি বর্গা চাষ ও দিনমজুরি করেই খেতে হবে। কিন্তু বাবা-মার কথা না শুনে দেশের প্রয়োজনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মিছিলে যোগ দেয় সুমন।

সুমনের দাদি ফুলজান নেছা আদরের নাতির শোকে মুহ্যমান। বড় নাতিকে নিয়ে তার অনেক আশা ছিল। তিনি বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, সুমন সব সময় বলতো তার পড়ালেখা শেষ হলে আমাদের সংসারে আর কোন অভাব থাকবে না। পরিবারের সকলকে বলতো, আমরা একদিন সচ্ছল হবোই।

তিনি বলেন, আল্লাহ যেন পরপারে সুমনকে সুখে রাখে। সে যেন জান্নাতবাসী হয়। যারা সুমনকে হত্যা করেছে তাদের বিচার আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম।

এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় শাখার পক্ষ থেকে শহীদ সুমনের পরিবারকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু এ সহায়তা অপ্রতুল। তাই সুমনের পরিবার আর্থিক দুরাবস্থা ঘুচাতে সরকারের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশের স্বস্তি

টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস / ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই

২০২৪ সালের হাইয়েস্ট কালেকশন দরদের : শাকিব 

নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত

রাজনীতিতে আ.লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে: নুর

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে : মির্জা ফখরুল

খাসজমির দখল নিয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত

মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ক্রীড়াঙ্গন অন্যতম একটি মাধ্যম : আমিনুল হক 

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

আহত রানার পাশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

১০

ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক

১১

একদিকে প্রশান্তি, অশান্তিও বিরাজ করছে: শামা ওবায়েদ

১২

চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে যুবককে নির্যাতন

১৩

র‍্যানকন মটরসের সঙ্গে ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সলুশনের চুক্তি

১৪

জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য : নয়ন

১৫

‘এক ফ্যাসিস্টকে হটিয়ে আরেক ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না’

১৬

জুলাই বিপ্লবে আহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বাবুকে নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড

১৭

মাদকাসক্ত ছেলেকে কারাগারে দিলেন মা

১৮

কপ২৯-এর এনসিকিউজি টেক্সট হতাশাজনক : পরিবেশ উপদেষ্টা

১৯

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নিরাপদ থাকবে যেসব দেশ

২০
X