শিক্ষা কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক সংস্কার ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান এবং সুনির্দিষ্ট দাবি উপস্থাপন করতে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে করেছে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’।
বুধবার (০২ অক্টোবর) বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ‘আকরাম খাঁ’ হলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বিশিষ্ট লেখক ও এক্টিভিস্ট মাওলানা সাইমুম সাদির সঞ্চালনায় লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন বিশিষ্ট আলেম ও তাকওয়া মসজিদের খতিব মুফতি সাইফুল ইসলাম।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার কারিকুলাম এবং পাঠ্যপুস্তককে ক্রমান্বয়ে ইসলামবিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক রূপদান করেন। এনজিও এবং বহিঃশক্তির প্রেসক্রিপশনে তৈরি এই কারিকুলাম ছিল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিবিরোধী। চরম সাম্প্রদায়িক বয়ানে লেখা হয়েছিল ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক। ফলে বাংলার স্বর্ণযুগ হিসেবে খ্যাত ‘সুলতানি আমল’ ছিল চরমভাবে উপেক্ষিত। ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ এবং ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ বইতে ছিল ট্রান্সজেন্ডার, যৌনবিকৃতি, অবাধ মেলামেশাসহ পশ্চিমা সংস্কৃতির ভয়াল অনুপ্রবেশ। যার ফলে অভিভাকদের চরম শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী যুগের বিতর্কিত শিক্ষাব্যবস্থা।
শহীদের রক্তে পাওয়া গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গণমানুষের মূল্যবোধের প্রতিফলন থাকবে, সেটাই ছিল কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু চিহ্নিত ইসলামবিদ্বেষী মহল ও সমকামিতার প্রকাশ্য সমর্থকদের নিয়ে গঠিত সমন্বয়-কমিটি ইসলামপন্থি জনতাকে চরম হতাশ করে৷ এই কমিটিতে ইসলামপন্থি জনতার কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না, অথচ এই বিপ্লবে ইসলামপন্থিরা সরাসরি অংশ নিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন।
আরও বিস্ময়কর দিক হলো, ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট রেজিম জঘন্য ট্রান্সজেন্ডার মতবাদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিল। আর এই সাবজেক্ট সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ড. সামিনা লুৎফার মতো চিহ্নিত ট্রান্সজেন্ডার এবং সমকামিতার সমর্থকদের। অপরদিকে ইসলাম শিক্ষা বইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্বঘোষিত হাদিস অস্বীকারকারী ও চরম বিতর্কিত ব্যক্তি আবু সাইদ খানকে। এ বিষয়গুলো জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ও দুঃখের সঞ্চার করে।
সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করে, বিগত রেজিমের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিল ইসলাম বিদ্বেষীরা। গণমানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন সরকারকে বিপাকে ফেলতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে তারা পরিকল্পিতভাবেই এসব করছে।
এ ছাড়াও বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কতৃক ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ‘স্বার্থান্বেষী মৌলবাদী মহল’ আখ্যা দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। তার এই বক্তব্যকে ‘ফ্যাসিবাদি’ এবং ‘ইসলামবিদ্বেষ-প্রসূত’ আচরণ বলে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে সরকারের কাছে তারা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
১। পাঠ্যপুস্তক চূড়ান্ত এবং ছাপানোর আগে তা অবশ্যই একদল মার্জিত ও অবিতর্কিত শিক্ষাবিদের দ্বারা পর্যালোচনা করাতে হবে। যারা ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংবেদনশীল বিষয়গুলো চিহ্নিত করবেন এবং সংশোধন করবেন। প্রয়োজন হলে স্কলারদের সাথে পরামর্শ করে বাদ দেবেন। এই দলে অবশ্যই যোগ্য আলিমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২। পাঠ্যপুস্তকে এমন কোনো ভিনদেশি মতাদর্শ প্রচার করা যাবে না, যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সাংস্কৃতি এবং ইমানি মূল্যবোধকে আঘাত করে। বিশেষ করে এলজিবিটি এবং জেন্ডার আইডিওলজিসহ ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কনটেন্ট এই মুসলিম অধ্যুষিত দেশের বইতে থাকা যাবে না।
৩। পাঠ্যপুস্তক থেকে চরম সাম্প্রদায়িক বয়ান বাদ দিয়ে সঠিক ইতিহাস তুলে আনতে হবে। ইতিহাস পাঠে অবশ্যই বাংলার সোনালি যুগ অর্থাৎ সুলতানি আমলের নিরপেক্ষ ইতিহাস ও অবদানের কথা নিশ্চিত করতে হবে, যা পূর্বেকার স্বার্থান্বেষী মহল ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়েছিল।
৪। কীসের ভিত্তিতে এই সমন্বয় কমিটি এবং সংশোধন ও পরিমার্জন টিম গঠিত হলো ও সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হলো এবং কেন সেখানে যোগ্য শিক্ষাবিদ ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ নেই, সেটা জাতির কাছে স্পষ্ট করতে হবে।
৫। গণমানুষের চাহিদাকে আমলে নিয়ে আগামী বছরের জন্য নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতিফলন থাকবে।
‘সচেতন নাগরিক সমাজ’ একই সাথে আরও আরেকটি বিষয় যুক্ত করে। তারা বলেন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের বক্তব্যের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্যকে জনপরিসরে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা এবং ইসলামবিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গণ্য করা হবে।
এরপর প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রফেসর ড. মুখতার আহমেদ, শায়খ আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা রেজাউল করিম আবরার, শরীফ আবু হায়াত অপু এবং ডা. মেহেদি হাসান।
মন্তব্য করুন