গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁনের ‘ডিসি নিয়োগে দুইজন সমন্বয়ক জড়িত’ বক্তব্যের জেরে একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ পোস্ট দেন তিনি।
সমন্বয়ক সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আজকে একটি প্রোগ্রামে গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খাঁন বললেন- সমকাল পত্রিকায় নাকি নিউজ হয়েছে দুইজন সমন্বয়ক ডিসি নিয়োগের সাথে জড়িত! নাম সারজিস আর হাসনাত! অলরেডি আওয়ামীলীগের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নাকি ডিসি নিয়োগের মাধ্যমে শুরু হয়ে গেছে। ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৬ জেলার ডিসি নাকি তারা নিয়োগ দিয়েছে!’
এরপর সারজিস আলম এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ সমকাল পত্রিকায় খুঁজে পাননি। পরবর্তী সময়ে যুগান্তর পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি সংবাদ খুঁজে পান তিনি। তার পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিচয় দিয়ে সচিবালয়ে একটি ঝামেলা তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আমাদের মতামত না নিয়ে আমাদের নাম উল্লেখ করে এক হলুদ সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করেছেন’।
সম্পূর্ন মিথ্যা এই সংবাদ কার স্বার্থে করেছে ওই সাংবাদিক ভালো জানেন বলে মন্তব্য করেন এ সমন্বয়ক।
‘সমন্বয়কদের নাম ব্যবহার করে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করার পরদিন ওই পত্রিকা দুঃখ প্রকাশ করে সংবাদ প্রকাশ করে কিন্তু যদিও সেটা মানুষের চোখে পড়েনি। কারণ ওই মানুষগুলো প্রকৃতপক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট’ -বলে উল্লেখ করেন সারজিস আলম।
রাশেদ খাঁন দেশের একটি রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য উল্লেখ করে তার ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম প্রশ্ন করেন, ‘দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে একটি ফোরামে তথ্য যাচাই না করে প্রচার করা কতটুকু শোভা পায়?’
নতুন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তার মতো তরুণদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘প্রথাগত কিছু রাজনীতিবিদদের মতো অন্যকে মিথ্যাচারের মাধ্যমে ছোট করে বড় হতে চাওয়ার যে কলুষিত টেকনিক, সেটার আশ্রয় নিয়ে তিনি (রাশেদ) শুধু নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন না বরং তরুণ নেতৃত্বের আস্থার জায়গায় সংকট তৈরি করলেন’৷
জনপ্রশাসন বিভাগে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, সঙ্গে তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম রয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘দায়িত্বের জায়গা থেকে প্রভাবিত করছেন আলী ইমাম মজুমদার এবং তার পিএস আহসান কিবরিয়া। আহসান কিবরিয়া শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে দুই মেয়াদে ছিলেন এমনকি ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের দিনও এই আহসান কিবরিয়া শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক। তাকে বর্তমানে পিএস বানিয়েছেন আলী ইমাম মজুমদার। এই মজুমদার যখন মন্ত্রীপরিষদ সচিব ছিলেন সেসময় একান্ত সচিব ছিলেন আহসনা কিবরিয়া’।
সারজিস আলম এ বিষয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ডিসি নিয়োগে যদি আওয়ামী দোসররা স্থান পায় তবে উপরে এই মানুষগুলো কি করছিল? দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তারা হয় ব্যর্থ, না হয় তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না’।
তিনি বলেন, ‘আমরা সমন্বয়করা নিয়োগ দেওয়ার কে? আমরা কি কোনো অথরিটি? সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে খাওয়ার এই অপচেষ্টা আপনাদের এই পর্যায়ে কি মানায়?’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘মন্ত্রীপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা আলী ইমাম মজুমদারকে কেন এখন জনপ্রশাসনের দায়িত্ব দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন রাশেদ খাঁনরা করতে পারে না। আহসান কিবরিয়া কীভাবে অভ্যুত্থানের পরও পিএস সেই প্রশ্ন তারা করতে পারে না। ডিসি নিয়োগ যদি আওয়ামীপন্থী দোসরদের দেওয়া হয় তাহলে তারা কীভাবে নিয়োগ পেল সেই প্রশ্ন জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবান কাউকে তারা করতে পারে না ৷
‘বঞ্চিত’ নাম ভাঙিয়ে কীভাবে বিভিন্ন বিভাগীয় মামলা খাওয়া কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার পদায়ন হচ্ছে সেই প্রশ্ন তারা করতে পারে না উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘নির্দিষ্ট ফিল্ডে কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া কীভাবে একজন সিনিয়র সহকারি সচিব- অতিরিক্ত সচিব বনে যায় সেই প্রশ্ন তারা করতে পারে না। এখনো কীভাবে সচিবালয়ে টাকা লেনদেন হয়, কারা সেটা করে সেই প্রশ্ন তারা করতে পারে না’৷
আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যদি আবার ক্ষমতায় আসে তবে সবার আগে যে ৫ জনকে ক্রসফায়ার দেবে তার মধ্যে সারজিস ও হাসনাত দুজন উল্লেখ করেন সারজিস আলম। এ ছাড়াও ফ্যাসিস্ট গংদের মতো বিভিন্ন দলের সঙ্গে লিংক খোঁজার অসুস্থ মানসিকতা বাদ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
দেশের জন্য যতদিন বেঁচে আছি ততদিন অনৈতিক সুপারিশ বা এক টাকার লেনদেনের অভিযোগ কেউ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করে ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘হাজার কোটি টাকার মালিক সালমান এফ রহমানের দাঁড়ি ছাড়া চোরের মতো অপরাধী চেহারাটা দেখার পরও যদি কারো শিক্ষা না হয়, তাহলে এই পৃথিবীতে তার জন্য কী অপমান অপেক্ষা করছে সেটা শুধু আল্লাহ জানে’৷
ফেসবুক পোস্টে সবশেষে সারজিস আলম লিখেন, ‘কথা ও কাজ হবে ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে। এটাকে আপনারা যে বিশেষণে বিশেষায়িত করুন তাতে আমরা বিন্দুমাত্র চিন্তিত নই বলে- সবার আগে আমার দেশ, আমার বাংলাদেশ- মন্তব্য করেন।
মন্তব্য করুন