গৃহকর্মে নিয়োজিত বাংলাদেশের ২৫ লক্ষাধিক গৃহকর্মীকে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি ও ‘শ্রমিক’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে শুরু হলো ‘গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম’র পথচলা।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) ‘গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম গঠন ও অভিষেক অনুষ্ঠান’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সহযোগিতায় ছিল অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ।
দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) এর বাস্তবায়নে ঢাকার ২০০ গৃহকর্মীকে নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই ফোরামের ঘোষণা দেওয়া হয়। ফোরামটি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে গৃহকর্মীদের অধিকার আদায়, গৃহকর্মীদের জন্য ২০১৫ সালের সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা বাস্তবায়ন, গৃহকর্মীদের উপর নির্যাতন ও হয়রানি প্রতিরোধ ও গৃহকর্মীদের শ্রমআইনে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ‘শ্রমিক’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে তৃণমূল থেকে নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত কাজ করবে।
‘সুনীতি’ প্রকল্পের অধীনে এই জাতীয় ফোরামটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সত্তা হিসেবে গৃহকর্মীরা নিজেরাই পরিচালনা করবেন। ২০২২ সদস্যের এই ফোরামটি ২১ জনের একটি কমিটি নিয়ে ১৬ হাজার গৃহকর্মীর উন্নয়নে কাজ করবে। ক্রমশ দেশব্যাপী তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।
‘গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম’র সভাপতি গৃহকর্মী জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমাদের মূল দাবি দেশের সকল গৃহকর্মীকে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক করে ‘শ্রমিক’ হিসেবে স্বীকৃতি। যে কারণে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা থেকে শুরু করে সকল ধরনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এমনকি দেশে ঠিক কত নারী গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত, তার সঠিক তথ্য-উপাত্তও নেই।
গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম রাষ্ট্রের কাছে এইসব দাবি নিয়ে কাজ করবে। এই ফোরাম সকল গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় কাজ করবো।’
অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, শ্রমিক হিসেবে ‘স্বীকৃতি’ প্রদানের বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই ফোরামের মাধ্যমে যে ১৬ হাজার গৃহকর্মীদের সাথে আমরা সম্পৃক্ত হচ্ছি, তারা নিজেদের অধিকার নিয়ে কাজ করবে। আমরা বিশ্বাস করি, এখানকার সফলতা অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করবে। চা-বাগানের শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করবে, নারী মৎস্যজীবীদের উদ্বুদ্ধ করবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে ২৫ লক্ষাধিক মানুষ গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন, যাদের ৯০ শতাংশ নারী। অনানুষ্ঠানিক খাতের এই বিশাল কর্মীরা জাতীয় অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখলেও, ‘শ্রমিক’ হিসেবে তারা বাংলাদেশ শ্রম আইনে এখনও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি।
ফলে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। যে কারণে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, ছুটি এবং যথাযথ মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
২০২২ সালে অক্সফ্যামের একটি গবেষণায় জানা যায়, নারী সদস্যদের প্রায় ৯৩ শতাংশ তাদের কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন। গৃহকর্মীদের ৬৭ শতাংশ মানসিক নির্যাতন, ৬১ শতাংশ মৌখিক নির্যাতন এবং ২১ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন।
অনুষ্ঠানে গৃহকর্মীরা ছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডোমেস্টিক ওয়াকার্স রাইটস্ নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক আবুল হোসেন, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এর তারেক আজিজ, ফারহানা আক্তার, ডিএসে’র যুগ্ম-পরিচালক প্রদীপ কুমার রায়, কর্মজীবী নারীর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা, দেবাশীষ কুণ্ডু প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিএসকে’র আফরিন আক্তার ও কর্মজীবী নারীর ফারহানা আফরিন তিথি।
১৮ হাজার নারী গৃহকর্মীদের পেশাগত ও জীবন দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে প্রকল্পটি। অনুষ্ঠানে মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, বাড্ডা ও মিরপুর অঞ্চলের হাবের গৃহকর্মীরা অংশ নেয়।
মন্তব্য করুন