বাসস
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মেয়ের জন্য খাবার কিনতে গিয়ে আর ফেরেননি শহীদ শাহাবুদ্দিন

শহীদ শাহাবুদ্দিনের পরিবার। ছবি : সংগৃহীত
শহীদ শাহাবুদ্দিনের পরিবার। ছবি : সংগৃহীত

গত পাঁচ আগস্ট সন্ধ্যায় মেয়ের জন্য খাবার কিনতে বের হয়েছিলেন শহীদ শাহাবুদ্দিন। তার আর ঘরে ফেরা হয়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা থানার সামনের চৌরাস্তায় এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে পুলিশ। সেখানে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় সিএনজিচালক শাহাবুদ্দিন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্সেস হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসারত অবস্থায় রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান।

শহীদ শাহাবুদ্দিন ভোলা সদর উপজেলার চর সামাইয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড এলাকার আবুল কালামের বড় ছেলে। তার মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। শাহাবুদ্দিন রাজধানীর শেরেবাংলা থানার সামনের চৌরাস্তা সংলগ্ন আনিসের বস্তির একটি ঘরে স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মা এবং ছোট বোনকে নিয়ে যৌথভাবে বসবাস করতেন। বস্তিতে তার বাবা আবুল কালামের ক্ষুদ্র ভাতের হোটেল ও নিজে সিএনজি চালিয়ে যা আয় করতেন তাতে মোটামুটি ভালোভাবেই চলে যেত তাদের পরিবার। কিন্তু শাহাবুদ্দিন শহীদ হওয়ায় পরিবারের ছন্দপতন ঘটে। তার মৃত্যুর পর গত কয়েকদিন আগে পারিবারিক কারণে পরিবারের সবাই ভোলা সদরের গ্রামের বাড়িতে আসেন।

বাসস’র সাথে আলাপকালে শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী বিবি হালিমা বলেন, গত পাঁচ আগস্ট সকাল থেকেই রাজধানীতে থমথমে অবস্থা ছিল। আমার স্বামী সিএনজি চালানোর জন্য সকালে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু রাজধানীর পরিস্থিতি খারাপ থাকায় সিএনজির মালিক গাড়ি নিয়ে বের হতে নিষেধ করে। সারাদিন ঘরেই ছিল। সন্ধ্যার আগে যখন প্রচুর গোলাগুলি হয়, তখন একবার ঘর থেকে বের হয়ে বাবার দোকানে গিয়ে একটি ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়ে বলে, দোকান বন্ধ করে তোমরা সবাই ঘরে চলে যাও। বলে সেও ঘরে ফিরে আসে।

বিবি হালিমা বলেন, শাহাবুদ্দিন ঘরে আসলে তাদের ছোট মেয়ে সানজিদা বাবার কাছে চিপস জাতীয় খাবারের বায়না ধরে। মেয়ের জন্য খাবার কিনতে বের হলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন শাহাবুদ্দিন। বর্তমানে হালিমা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে লামিয়া (১৪) ও সানজিদাকে (৭) নিয়ে ভীষণ অর্থ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বিবি হালিমা তার শ্বশুরের সাথে একই পরিবারে রয়েছেন। শ্বশুর স্বল্প আয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হওয়ায় অর্থ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে পরিবারে। তাই সরকারি সহায়তা কামনা করেছেন এই শহীদের স্ত্রী।

শহীদ শাহাবুদ্দিনের পিতা আবুল কালাম বাসস'কে বলেন, গত পাঁচ আগস্ট দুপুরের পর থেকেই হাসিনা সরকারের পতনের খবরে ছাত্র-জনতা রাজপথে বিজয় মিছিলসহ উল্লাসে মেতে ওঠে। হঠাৎ করে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে শেরেবাংলা থানার সামনের চৌরাস্তা সংলগ্ন এলাকায় একদল পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি করতে থাকে। এতে শাহাবুদ্দিনের মাথায় একটি গুলি লাগে। পরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্সেস হাসপাতালে রাত আটটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।

তিনি আরও বলেন, রাতেই তারা শাহাবুদ্দিনের মৃতদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে ভোলা রওনা দেন। পরদিন সকাল ১০টায় নিজ বাড়ির সামনে জানাজা শেষে দাফন করা হয় তাকে। সেদিন পুলিশের গুলিতে আরও কয়েকজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।

শাহাবুদ্দিনের পিতা জানান, অভাবের তাড়নায় বহু বছর আগে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভোলা ছেড়ে ঢাকায় এসেছেন। এক সময় রিক্সা চালিয়েছেন। এখন ছোট একটি ভাতের হোটেল দিয়েছেন। অনেক আশা ভরসা ছিল এই ছেলেকে নিয়ে। তাই শাহাবুদ্দিনের শহীদ হওয়ার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়েছেন তার বাবা।

শাহাবুদ্দিনের মা মনোয়ারা বেগম জানান, তাদের তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে শাহাবুদ্দিন ছিল সবার বড়। অন্য ছেলেরা আলাদা থাকলেও শাহাবুদ্দিন বাবা মাকে নিয়েই থাকতেন। ছেলে সব সময় বাবা মায়ের প্রতি আলাদা খেয়াল রাখত। মা-বাবার কোনো কষ্ট সহ্য করতে পারতো না এই ছেলে। ছেলের এমন অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তার স্বামীর বয়স হয়েছে, সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন তাই ভাবছেন।

শাহাবুদ্দিনের ছোট বোন ফাতেমা বলেন, তার অন্য দুই ভাই ঢাকায় আলাদা থাকেন। তাদের চার বোনের বিয়ে হয়েছে। একমাত্র অবিবাহিত ছোট বোন সাথী আক্তার বাবা-মা ও ভাই শাহাবুদ্দিনের সাথে ঢাকায় থাকতেন। আমরা ঢাকায় গেলে এই ভাইয়ের বাসায় গিয়ে উঠতাম।

তিনি আরও বলেন, বাবার ছোট ভাতের হোটেলের আয়ের পাশাপাশি সিএনজি চালিয়ে পরিবারের মূল আয়ের জোগান দিত ভাই। দুটি ছোট মেয়ে নিয়ে ভাবি খুবই সমস্যায় রয়েছেন। তাই সরকার তার পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন এমনটাই প্রত্যাশা তার।

শহীদ শাহাবুদ্দিনের বড় মেয়ে লামিয়া জানায়, তার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। বাবার মৃত্যুর পরে এখন লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অ্যাডভোকেট সাইফুলের খুনিদের কঠোর শাস্তি হবে : নাহিদ  ইসলাম

উত্তরে বেড়েছে শীতের প্রকোপ

বাংলাদেশ ধর্মীয় সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বিশ্বে অনন্য : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

আইনজীবী নিহতের ঘটনায় আটক ২৭

দুপুরে শহীদ মিনারে সমাবেশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

ইমরানের কথা অমান্য পিটিআইয়ের, বিক্ষোভে নতুন মোড়

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রয়েছে যেসব শর্ত

‘জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের রক্তের ঋণ আমরা যেন ভুলে না যাই’

বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে সন্তানের অনন্য প্রয়াস

১০

কোনো উসকানিতে পা না দেওয়ার আহ্বান শিবিরের

১১

আলমারি-টেবিল এখনো গুছিয়ে রাখছেন মা, কিন্তু ছেলে যে আর ফিরবে না

১২

রাজশাহীতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট

১৩

বায়ুদূষণের শীর্ষে সারায়েভো, ঢাকার কী পরিস্থিতি?

১৪

নিকলীতে ১৪৫ হাঁস খামারে বেকারদের কর্মসংস্থান

১৫

সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইমরান খানের কঠোর বার্তা

১৬

লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি শুরু

১৭

‘আমাকে বাঁচাও, আমি বাঁচতে চাই’

১৮

চুইংগাম ভালো নাকি খারাপ?

১৯

২৭ নভেম্বর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২০
X