কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ পিএম
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জলবায়ু পরিবর্তন সবার জন্য হুমকি : ড. ইউনূস 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য শক্তিশালী সম্পদ কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (সেপ্টেম্বর ২৭) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস।

বাংলায় দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে আমাদের জীবন রক্ষাকারী প্রযুক্তিগুলোর সুবিধা দরকার, বিশেষত কৃষি, পানি বা জনস্বাস্থ্যে, যেখানে পরিমিত সমাধান বা উদ্ভাবন লাখ লাখ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে পারে।

ইউনূস বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সবার জন্য অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই গ্রীষ্মে স্মরণকালের তাপপ্রবাহ বিশ্বকে জলবায়ু-প্ররোচিত পরিবর্তনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো জলবায়ুতে ন্যায়বিচার। যাতে দায়িত্বজ্ঞানহীন পছন্দ বা উদাসীন পদক্ষেপ বা ক্ষতির হিসাব করা হয়।

তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি চারদিকে অপূরণীয় ক্ষতি করে। আমরা জীব-বৈচিত্র্য হারাচ্ছি, রোগজীবাণু পরিবর্তন নতুন রোগের দিকে পরিচালিত করে, চাষাবাদ চাপে পড়ছে, পানিসম্পদের সংকোচন আবাসস্থলের জন্য হুমকিস্বরূপ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও লবণাক্ততা জীব-বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে।

ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার ক্রমবর্ধমান তীব্রতা এবং ফ্রিকোয়েন্সির দিক থেকে ক্ষয়ক্ষতি উপেক্ষা করা যায় না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের ক্ষুদ্র কৃষক এবং কারিগরি কাজ নির্ভররা আরও গভীরভাবে জলবায়ু ঝুঁকির সম্মুখীন হন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমি যখন কথা বলছি, তখন বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের জীবদ্দশায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা প্রত্যক্ষ করছে।

তবুও, মহাসচিব গুতেরেস দেখিয়েছেন যে, ‘বর্তমান গতিপথ’র বিশ্ব +২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্ব ক্রমবর্ধমানভাবে ডি-কার্বনাইজেশনের দিকে মনোনিবেশ করছে। এ ধরনের পরিবর্তন যাতে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের জন্য উপকারী হয়, সেজন্য নেটজিরো বিশ্বের রূপান্তরমূলক রূপকল্প বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্যও পুনরুদ্ধার করতে হবে।

অন্যথায়, আমরা ‘অংশীদারিত্বমূলক দায়িত্বের’ মাধ্যমে ‘অংশীদারিত্বমূলক সমৃদ্ধি’র অঙ্গীকার থেকে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছি বলে উল্লেখ করেন ইউনূস।

তিনি বিশ্বাস করেন, শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নীট কার্বন নিঃসরণকে লক্ষ্য করে বিশ্বকে ‘তিনটি শূন্য’র একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে জড়িত হওয়া দরকার।

তিনি বলেন, যেখানে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে একজন তরুণ চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নয়, উদ্যোক্তা হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। যেখানে একজন তরুণ সব ধরনের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তার সুপ্ত সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারে। একজন উদ্যোক্তা সামাজিক সুবিধা, অর্থনৈতিক মুনাফা এবং প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতার মধ্যে সর্বোত্তমভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন। সামাজিক ব্যবসা একজন ব্যক্তিকে ভোগবাদের ঊর্ধ্বে উঠতে সাহায্য করতে পারে এবং চূড়ান্তভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তরে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সময় নতুন মনোভাব, মূল্যবোধ, চুক্তি, সম্প্রদায় এবং দেশগুলোতে, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একইভাবে সব শীর্ষ ব্যক্তি এবং স্টেকহোল্ডারদের কাছে দাবি করে।

তিনি বলেন, আমরা যদি এ ধরনের পথ সংশোধন করতে চাই, তাহলে জাতিসংঘ ব্যবস্থা, জাতীয় ও উপ-জাতীয় সরকার, বেসরকারি সংস্থা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জনহিতকর প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে চলতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা যদি বিদ্যমান অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে ‘সামাজিক ব্যবসা’কে মেনে নিই এবং এর অন্তর্ভুক্ত করি, তাহলে আমরা প্রতিটি সমাজে জনগণের নীচের অর্ধেকের জীবনে অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারি।

তিনি বলেন, তারা যদি বাস্তবিকভাবে সামাজিক ব্যবসার অবস্থান তৈরি করতে পারে, তাহলে আমরা বিদ্যমান বাজার অর্থনীতির মধ্যে জলবায়ু-সংবেদনশীল বিকৃতি রোধ করতে পারি।

অধ্যাপক ইউনূস এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পার্লামেন্টে হাতাহাতিতে জড়ালেন এমপিরা

উত্তরে আরও কমল তাপমাত্রা

আজকের দিনটি কেমন কাটতে পারে, জেনে নিন রাশিফলে

ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব তিন দিনের রিমান্ডে

‘বাবা চকলেট নিয়ে আসত, এখন আসে না কেন?’ কাতর প্রশ্ন শিশু শাম্মির

সব ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে নতুন কর্মসূচি

৩৬ ঘণ্টার মধ্যে লেবাননে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করবেন ম্যাখোঁ-বাইডেন

অফিসার পদে নিয়োগ দিচ্ছে আড়ং

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে উত্তাল পাকিস্তান, পুলিশ নিহত

নিম্নচাপে সাগর উত্তাল, আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি

১০

২৬ নভেম্বর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১১

কমল সোনার দাম, বর্তমান মূল্য কত?

১২

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

১৩

২৬ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৪

জামায়াত নেতাকে নির্যাতন, ১২ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

১৫

এবারও বিশ্বসেরা পর্যটনের দেশ মালদ্বীপ 

১৬

‘আ.লীগ যাতে বিএনপির কোথাও অনুপ্রবেশ করতে না পারে’

১৭

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা জটিলতায় সহযোগিতার আশ্বাস হাবিপ্রবি প্রশাসনের

১৮

বর্ণিল আয়োজনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

১৯

চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মিছিল

২০
X