দেশের সেবা করার স্বপ্ন ছিল আব্দুল আহাদ আলীর। যোগ দিতে চেয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে সে স্বপ্ন ভেঙে গেলো তার। তবে শেষ পর্যন্ত দেশের জন্যই শহীদ হলেন আহাদ।
মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা ইউনুস আলী ও পাখি খাতুন দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে আহাদ আলী বড়। স্থানীয় আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বষের্র ছাত্র ছিলেন তিনি। ভ্যানচালক পিতার স্বপ্ন ছিল ছেলের হাত ধরে দিন বদলাবে তার। কিন্তু ছেলের মৃত্যু সব স্বপ্নকে চিরদিনের জন্য স্তব্ধ করে দিয়েছে।
ঘটনা ৪ আগস্টের। তখন বেলা ১১টা। মহম্মদপুর আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্রদের একটি মিছিল বের হয়। পুলিশ শুরুতে ছাত্রদের মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পাঁচজন ছাত্রকে আটক করে মহম্মুদপুর থানায় নিয়ে যায়। পাঁচজন ছাত্রর আটকের প্রতিবাদে অন্য ছাত্ররা আবারও সংগঠিত হয়ে দলবদ্ধভাবে মিছিল নিয়ে থানার দিকে অগ্রসর হয়। ছাত্রদের মিছিলটি থানার কাছাকাছি গেলে প্রায় ৩ থেকে ৪শ গজ দূর থেকে পুলিশ সরাসরি গুলি করে। এ সময় আব্দুল আহাদের বুক চিরে একটি গুলি পেছন দিকে বেরিয়ে যায়। থানার সামনে শহীদ হন আহাদ আলী।
বাবা ইউনুস আলী ছেলেকে নিয়ে আরও বলেন, আব্দুল আহাদ আলী অত্যন্ত সহজ সরল ছিল। সে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। মহম্মদপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে, মহম্মদপুর বরকতিয়া এস আর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে। পরে আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়। আহাদ আলীর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি।
এদিকে আন্দোলনে শহীদ আব্দুল আহাদ আলীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করে পরিবারের কাছে এক পঙ্ক্তিমালা হস্তান্তর করে। এতে লেখা রয়েছে ‘তুমি আমাদের গর্ব, তুমি আমাদের অহংকার, তোমার ত্যাগের কথা, তোমার অবদানের কথা ভবিষৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া, তোমাকে স্মরণীয় করে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব’।
আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জিএম শওকত রেজা বিপ্লব বলেন, শহীদ আব্দুল আহাদ আলী কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। সে অত্যন্ত বিনয়ী ও ভালো ছেলে ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহীদ হওয়ার পর সমবেদনা জানাতে কলেজের সব শিক্ষক-কর্মচারীসহ তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।
তিনি জানান, শহীদ আহাদ আলীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় কলেজের পক্ষ থেকে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল করা হয়েছে। তার পরিবারকেও কলেজের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে ।
তবে তার ভ্যানচালক পিতার পক্ষে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ কঠিন। তাই পরিবারটির আর্থিক সহায়তায় সবার এগিয়ে আসা দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মন্তব্য করুন