কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৩ পিএম
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্টেনোগ্রাফার থেকে দুদকের উপপরিচালক, গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়

ইনসেটে আবু বকর সিদ্দিক। ছবি : সংগৃহীত
ইনসেটে আবু বকর সিদ্দিক। ছবি : সংগৃহীত

বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন আবু বকর সিদ্দিক। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যায়ক্রমে হন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক। ঘুষের বিনিময়ে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দিয়ে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। সহকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘জিনের বাদশা’ নামে।

জানা গেছে, বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন আবু বকর সিদ্দিক। পর্যায়ক্রমে হন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক। তার এই পদোন্নতির পেছনেও রয়েছে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। ঘুষের বিনিময়ে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দিতেন তিনি। তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিতেন ডলার ও ইউরোতে।

কালবেলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও চাকরিকালে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন আবু বকর। রাজধানীর অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি ভবনসহ ডজন খানেক প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। তাকে টাকা দিলেই মিলে যেত দুদকের ‘ক্লিনশিট’। দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে তিনি ঘুষ নিতেন ডলার ও ইউরোতে। তার দুই ছেলে থাকেন যুক্তরাজ্যে। ঘুষের টাকা সেখানে পাঠিয়ে দেন হুন্ডিতে। আর সেই টাকা ‘রেমিট্যান্স’ হয়ে আবার চলে আসে আবু বকরের কাছে।

আবু বকরের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুদকে তদবির বাণিজ্য সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা ছিলেন আবু বকর। ছিলেন দুর্নীতিবাজদের রক্ষক। দুর্নীতিবাজদের সব সমস্যার ‘মুশকিল আসান’ ছিলেন তিনি। টাকা নিয়ে দুদকের মামলার দায়মুক্তি পেতে সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির চিঠি ইস্যু করে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করতেন এই কর্মকর্তা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অবসরে যাওয়ার আগে তার সর্বশেষ বেতন ছিল সর্বোচ্চ ৫০-৬০ হাজার টাকা। অথচ তার সম্পদের ফিরিস্তি দেখে খোদ দুদক কর্মকর্তাদেরও ভিরমি খাওয়ার উপক্রম।

রাজধানীর পূর্বাচলে আবু বকরের জমি থাকার তথ্য পেয়েছে কালবেলা। পূর্বাচলের ২৫ নম্বর সেক্টরে জয় বাংলা চত্বর সংলগ্ন ৫ কাঠা করে দুটি প্লটে ১০ কাঠা জমি আছে তার। সেখানেও বাড়ি নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া মুগদা বড় মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় একটি ডেভেলপার কোম্পানির মাধ্যমে আবু বকর তার জমিতে ১০ তলা ভবন তৈরি করছেন। সম্প্রতি সেখানে একজন ক্রেতা ফ্ল্যাট কিনতে যান। তিনি দুদক কর্মকর্তার ভবন শোনার পর ফ্ল্যাট না কিনে ফিরে আসেন। এর বাইরে রাজধানীর বনশ্রী, আফতাবনগর, উত্তর বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে ডজন খানেক ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। নিজ জেলা জামালপুরেও রয়েছে বিপুল সম্পদ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দুদকের অসাধু কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক ছিলেন সাবেক এই উপপরিচালক। যতই অপরাধ থাক না কেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করে চাহিদামতো ঘুষ দিলে দুর্নীতিবাজরা অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলা থেকে দায়মুক্তি পেতেন। এজন্য দুর্নীতির জালে আটকালে বা মামলা হলেই আবু বকরের কাছে যেতেন অভিযুক্তরা। আবু বকর তার সিন্ডিকেট ব্যবহার করে তাদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা করতেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেইলের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন আবু বকর। তার সিন্ডিকেটভুক্ত জুনিয়র কর্মকর্তাদের দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে নোটিশ ইস্যু করাতেন। তারপর শুরু হতো দেনদরবার। দুদকের মামলা থেকে বাঁচতে ও সামাজিক সম্মান হানির ভয়ে অনেকে আবু বকরের দ্বারস্থ হতেন। মোট অঙ্কের টাকা নিয়ে তিনি সব ‘মুশকিল আসান’ করে দিতেন।

এদিকে, ভাটারা থানাধীন নতুন বাজার এলাকায়ও আবু বকর সিদ্দিকীর একটি ১০ তলা আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের তথ্য নিশ্চিত হয়েছে কালবেলা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভাটারার নতুন বাজার এলাকার ১০ তলার ভবনটিতে সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ভবনটির নাম ‘মিয়া ভাই প্লাজা।’ ভবনের তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন আবু বকর সিদ্দিক। তিনি ভবনটির মালিক ও মালিক সমিতিরও সভাপতি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত এপ্রিলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৮ সালে মামলা করে দুদক। সেই মামলা থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক আবু বকরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় আবু বকর তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করার কথা জানিয়ে ৬০ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি নগদ টাকা নিয়ে বাসায় গেলে ওই টাকা ডলারে কনভার্ট করে দিতে বলেন। শামসুজ্জামান স্বীকারোক্তিতে বলেন, আবু বকরকে ৩০ লাখ টাকার সমপরিমাণ ডলার দেন। এতে বদলে যায় তদন্ত কর্মকর্তা। শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে থাকা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের উপপরিচালক গোলাম মাওলাকে। এই কর্মকর্তাও বিভিন্ন সময় শামসুজ্জামান ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা দিয়েছেন। টাকা পেয়ে গোলাম মাওলা তাকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশসহ কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেন। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত আরও কয়েকজন কর্মকর্তাও এ ধরনের তথ্য জানিয়েছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাহরাইনে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি নিহত

সাবেক এমপি এনামুলকে কারাগারে ব্যাপক মারধর

সিজিআই ইভেন্টে বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়ে মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাস

‘জনগণের চাহিদা পূরণ না করে ভারতে ইলিশ পাঠানো অন্যায়’

যবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে যোগ দিলেন ড. আব্দুল মজিদ

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন ১০ কর্মকর্তাকে বদলি 

কক্সবাজারে ৫৩০ বস্তা পলিথিন জব্দ

১২ সপ্তাহের আল্টিমেটাম / প্রি-পেইড মিটার বাতিলের দাবিতে বিদ্যুৎ অফিসে গ্রাহকদের বিক্ষোভ

ছাত্র-জনতার ঐক্য নষ্ট করার জন্য একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে : আবু হানিফ 

বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত 

১০

ঐক্যবদ্ধভাবে গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত রাখব : নাহিদ ইসলাম

১১

আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক / এস আলম এবং কেডিএস ঘনিষ্ঠ দু’জনকে অতিরিক্ত এমডি পদে নিয়োগের আয়োজন

১২

গৃহবধূর ঘরে আপত্তিকর অবস্থায় পুলিশ কর্মকর্তা ধরা

১৩

‘জামায়াতের কর্মীরা জীবন দিতে জানে, পালাতে জানে না’

১৪

জাপান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োজনে সহায়তা দিতে প্রস্তুত : রাষ্ট্রদূত 

১৫

‘জন্মের পর রাস্তায় মাটি দিতে দেখিনি, মেরামত-সংস্কার তো দূরের কথা’

১৬

ববি ছাত্রলীগের এক নেতার থেকেই সাড়ে ৪ লাখ টাকা পান স্থানীয়রা

১৭

প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতে সাবেক এমপি মমিন মণ্ডলের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

১৮

এমপি আনার ‘হত্যা রহস্য’ নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিকের বই

১৯

জানা গেল জবিতে সশরীরে ক্লাস শুরুর তারিখ

২০
X