বাসস
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫০ পিএম
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বাসসের প্রতিবেদন

স্বৈরাচারের বুলেট কেড়ে নিল মারুফের বিজয় আনন্দ

গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে গুলিতে নিহত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী মারুফ। ছবি : সংগৃহীত
গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে গুলিতে নিহত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী মারুফ। ছবি : সংগৃহীত

পরিবারে সবার শেষে যে সদস্য পৃথিবীতে এসেছিলেন সে চলে গেছেন সবার আগে। তার চঞ্চলতায় আর হাসি কান্নায় পরিবারকে মাতিয়ে রাখতো সারাটিবেলা। মা-বাবার আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ছোট সদস্যটি। বড় ছেলে অসুস্থ বাসায় থাকে ছোট ছেলের দুরন্তপনায় বাবা-মা সুখ খুঁজে পেতেন। ছোট ছেলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পেত পরিবার। কিন্তু না একটি বুলেটে মুহূর্তেই তাদের এই বেঁচে থাকার প্রত্যাশাকে বিষাদে পরিণত করল। এখন মা-বাবা ছোট ছেলের স্মৃতিচারণ করে বাকি জীবন পার করবে।

বলছিলাম সাভার টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের বাণিজ্য বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মিঠু ওরফে মারুফ (১৯)। সাভারের বাসিন্দা শাহজাহান ইসলাম ও মালা আক্তারের পুত্র মিঠু দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট। মারুফের বড় ভাই মীরজাহান মিলন শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাড়িতেই থাকেন। মারুফের আরও একটি পরিচয় আছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন তিনি। গত ৫ আগস্ট ‘স্বৈরাচার সরকার পালিয়েছে, আমরা এখন স্বাধীন, আমাদের বিজয় হয়েছে। আমি বিজয় মিছিলে যাচ্ছি’ পরিবারকে এ কথা বলেই উচ্ছ্বসিত হয়ে বিজয় মিছিলে যোগ দিতে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন মারুফ। কে জানতো এটাই মারুফের শেষ কথা পরিবারের সঙ্গে।

বিজয় মিছিল শেষে সবাই বাড়ি ফেরেন- শুধু ফেরেনি মারুফ। তবে ফিরেছে বিজয়ের দিনে লাশ হয়ে পরিবারের নিকট। জানা যায় বিজয় মিছিলে স্বৈরাচারের বুলেট মুহূর্তেই কেড়ে নেয় মারুফের বিজয় আনন্দ। পরিবারে এখন নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মারুফের বাবা শাহজাহান ইসলাম বলেন, ‘কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজপথে সক্রিয় ছিল মারুফ। জুলাই মাসে সবগুলো আন্দোলনে বন্ধুদের সাথে যোগ দেন তিনি। গত ৫ আগস্ট ‘রোড মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে বন্ধুদের সাথে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে সকালে বের হয়ে যায় ছাত্র আন্দোলনের কর্মী মারুফ। বেলা ১১টার দিকে মারুফসহ তার বন্ধুরা যখন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার উলাইল বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করছিলেন তখন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ আর পুলিশ মিলে তাদের গতিরোধ করে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একাধিকবার ঢাকার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে দুপুর ২টার দিকে বাড়ি ফিরে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরই জানা যায়, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন।’

শাহজাহান ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে উল্লসিত হয়ে মারুফ পরিবারকে বলতে থাকে, ‘আমরা এখন স্বাধীন, আমাদের বিজয় হয়েছে। আমি বিজয় মিছিলে যাচ্ছি’- আমাদের এ কথা বলেই বিকেলের দিকে আমাদের কলেজ রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ঘাতকের বুলেট এসে লাগে মারুফের বুকে। গুলিবিদ্ধ মারুফ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ অবস্থায় বেশ কিছুক্ষণ রাস্তায় পড়েছিলেন তিনি। পরে মারুফের সাথে থাকা বন্ধু ও পরিচিতজনরা ধরাধরি করে। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে যান মারুফের পরিবার।

মারুফের বাবা শাহজাহান ইসলাম বলেন, দুরন্তপনায় সারাদিন বাড়ি মাতিয়ে রাখা মারুফ আজ নেই। ছেলেকে হারিয়ে বাড়িটি এখন শূন্যতায় হাহাকার করে। বড় ছেলে শারীরিকভাবে অসুস্থ। চঞ্চলতায় ভরপুর ছোট ছেলে চলে গেছে আমাদের ছেড়ে এ শোক কাটাবো কীভাবে? কীভাবে ভুলবো মারুফের স্মৃতি।

এসময় তিনি মারুফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ বিচার দাবি করে বলেন, ‘ছেলে হত্যার প্রকৃত বিচার পেলে কিছুটা হলেও শান্তি পাবো।’

পুত্রশোকে কাতর শাহজাহান ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলে মারুফের ছিল খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক। বড় হয়ে ভালো খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। খেলার প্রতি বেশী আগ্রহ থাকায় গ্রামের বাড়ি মাগুরায় গিয়ে মাগুরা জেলা ক্রীড়া সংস্থায় ভর্তি করানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সেখানে সুযোগ না পেয়ে সাভার টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে ভর্তি করি।

মারুফের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক নার্গিস আক্তার বলেন, মারুফ অত্যন্ত বিনয়ী একজন শিক্ষার্থী ছিল। ছাত্র হিসেবেও ভালো ছিলো। মারুফের মৃত্যুতে তিনি শোক প্রকাশ করেন ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

মারুফের বন্ধু মান্নান বলেন, বন্ধু হিসেবে মারুফ ছিল অমায়িক। ওর মতো বন্ধু পেয়ে আমরা গর্বিত। ও যে কোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতো। ৫ আগস্ট বিকেলে বিজয় মিছিলে আমিও ওর সঙ্গেই ছিলাম। মারুফসহ অন্যরা আমাদের থেকে একটু আগে অগ্রসর হওয়ায় আমরা পেছনে পড়ে যাই। এর কিছুক্ষণ পরই মারুফ বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে আমি ও পরিচিত কয়েকজন হুইল চেয়ারে করে তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মারুফের অসুস্থ বড় ভাই মীরজাহান মিলন মারুফ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, ‘দায়ীদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক যাতে করে ঘাতকরা আর পরবর্তীকালে এমন দুঃসাহস দেখাতে না পারে। এমন হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠতে না পারে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাহরাইনে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি নিহত

সাবেক এমপি এনামুলকে কারাগারে ব্যাপক মারধর

সিজিআই ইভেন্টে বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়ে মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাস

‘জনগণের চাহিদা পূরণ না করে ভারতে ইলিশ পাঠানো অন্যায়’

যবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে যোগ দিলেন ড. আব্দুল মজিদ

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন ১০ কর্মকর্তাকে বদলি 

কক্সবাজারে ৫৩০ বস্তা পলিথিন জব্দ

১২ সপ্তাহের আল্টিমেটাম / প্রি-পেইড মিটার বাতিলের দাবিতে বিদ্যুৎ অফিসে গ্রাহকদের বিক্ষোভ

ছাত্র-জনতার ঐক্য নষ্ট করার জন্য একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে : আবু হানিফ 

বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত 

১০

ঐক্যবদ্ধভাবে গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত রাখব : নাহিদ ইসলাম

১১

আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক / এস আলম এবং কেডিএস ঘনিষ্ঠ দু’জনকে অতিরিক্ত এমডি পদে নিয়োগের আয়োজন

১২

গৃহবধূর ঘরে আপত্তিকর অবস্থায় পুলিশ কর্মকর্তা ধরা

১৩

‘জামায়াতের কর্মীরা জীবন দিতে জানে, পালাতে জানে না’

১৪

জাপান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োজনে সহায়তা দিতে প্রস্তুত : রাষ্ট্রদূত 

১৫

‘জন্মের পর রাস্তায় মাটি দিতে দেখিনি, মেরামত-সংস্কার তো দূরের কথা’

১৬

ববি ছাত্রলীগের এক নেতার থেকেই সাড়ে ৪ লাখ টাকা পান স্থানীয়রা

১৭

প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতে সাবেক এমপি মমিন মণ্ডলের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

১৮

এমপি আনার ‘হত্যা রহস্য’ নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিকের বই

১৯

জানা গেল জবিতে সশরীরে ক্লাস শুরুর তারিখ

২০
X