সংস্কারের প্রতিশ্রুতি না মানায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি তারা আরইবি ব্লকেড কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তারা জানিয়েছেন, দেশের ১৪ কোটি মানুষের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং টেকসই ও যুগোপযোগী বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে চলতি বছরের শুরু থেকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সকল চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত সকল কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ০২ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছেন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, আন্দোলনের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে সরকারের পক্ষ থেকে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ এবং সংস্কারে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিপত্তি সৃষ্টি করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। এতে ভেতরে ভেতরে সংক্ষুব্ধ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অনাস্থা জারি করে ‘আরইবি ব্লকেড’ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের অভিযোগ বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমের সংস্কারসহ অন্যান্য সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য ০৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু আরইবি এতে অসহযোগিতা করছে।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হয়।
বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলেন, সমস্যা সমাধানে একটি কমিটি করা হলেও উক্ত কমিটির সভায় অনুপস্থিত থেকে এবং আরইবির পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন না দিয়ে উল্টো বিদ্যমান কাঠামো বহাল রাখার প্রস্তাব দেয় বোর্ড।
তারা বলেন, গত ২৮ আগস্ট পবিসের প্রতিনিধির সঙ্গে চেয়ারম্যানের মতবিনিময় সভায় সমস্যার সমাধানে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সকল কমিটিতে আরইবি এবং পবিসের সমান সংখ্যক সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নির্দেশনা দিলেও সেই নির্দেশনার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি।
শুধু তাই নয়, সরকারি এবং সিএ ফার্মের অডিট ছাড়া আরইবি কতৃক হয়রানিমূক যে ৮ ধরনের অডিট পরিচালনা করা হয় সেগুলো আরইবি সংস্কারের আগ পর্যন্ত বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কমিটির কোন সুপারিশ ছাড়াই গত ১২ সেপ্টেম্বর পুণরায় অডিট কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেন বিআরইবি চেয়ারম্যান। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ৮০টি সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার/জেনারেল ম্যানেজারের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানকে প্রতিশ্রুতি রক্ষার মাধ্যমে সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ বজায় রাখতে চিঠি দেয়া হয়। পাশাপাশি সিনিয়র জিএম/জিএম এবং সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সেই সুযোগ দেয়া হয়নি।
পবিস কর্মকর্তা কর্মচারীরা আরো অভিযোগ করেন, সম্প্রতি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সমিতির জনবলের বিকল্প তৈরির অপচেষ্টা হিসেবে ঠিকাদার/উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানের জনবলকে উপকেন্দ্র পরিচালনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি এবং অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ। এমনকি অতীতে এ ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করার কোন নজিরও নেই।
তারা আরও অভিযোগ করেন, আরইবি সমস্যা সমাধানে প্রকৃত উদ্যোগ গ্রহণা না করে উল্টো আইনশৃংখলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থায় ভুল বার্তা দিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্ত করছে। এসব নানা বিষয়ে বোর্ডের কর্মকাণ্ডে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে ক্ষোভ ও চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন দুরভিসন্ধিমূলক কাজের জন্য চেয়ারম্যানের প্রতিও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, দেশের ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সেবা প্রদানের জন্য ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সক্ষমতা রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্রাহক সেবা প্রদানের জন্য মধ্যস্বত্বভোগী আরইবির কোন প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে নেই। মাথাভারী সংস্থা হিসেবে দেশের মানুষের উন্নত বিদ্যুৎ সেবা প্রাপ্তিতে বিঘ্নসৃষ্টিকারী হিসেবে পরিচিত না হয়ে আধুনিক ও টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ ও পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমকে অস্থিতিশীলকারী কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে পুনরায় আরইবি ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে।
পুনরায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে কোন প্রকার ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিলে আগামী ০১ অক্টোবর থেকে আরইবির প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা জারি করে ‘আরইবি ব্লকেড’ কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেরাই দায়িত্ব তুলে নিয়ে সরকারের নিকট পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অপ্রয়োজনীয়তা প্রদর্শন করা হবে।
মন্তব্য করুন