জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৬ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল ৮টা ১৬ মিনিট) জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করে। বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে যাবেন।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ সময় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টা ১০ মিনিটে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন নিরাপত্তা, গণমাধ্যমকর্মীসহ মোট ৫৭ জন।
সফরকালে ইউরোপীয় কমিশন প্রধান, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান, যার ফলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে সু-বাতাস বইছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি মার্কিন একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা ঘুরে যাওয়ার পরপরই দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হতে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকে দুই দেশের শীর্ষ নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে কোথায় নিতে চান, সহযোগিতার বিষয় চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারগুলো কী হতে পারে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ ২৫ বছর পরে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০০০ সালে ঢাকা সফরে এসেছিলেন মার্কিন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। সেই সময় দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। সেই সময় ক্লিনটনের ঢাকা সফরের পেছনেও অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিলেন ড. ইউনূস।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যান এবং কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন না। সেখানে ইউনূসের সঙ্গে তার দেখা হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সম্মানের। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জো বাইডেনের মধ্যকার বৈঠকটি দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার এবং বিশ্ব ঢাকার প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থনের বার্তা পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সারা বিশ্বেই জনপ্রিয় ও পরিচিত এক মুখ। তার ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্যদূরীকরণ তত্ত্ব আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তিনি জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ভাষণ দিয়েছেন সিনেটসহ অনেক রাষ্ট্রের আইনসভায়। তবে এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে সম্পূর্ণ নতুনরূপে হাজির হচ্ছেন বরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ।
মন্তব্য করুন