বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে বগুড়ার শিশু শিক্ষার্থী জুনায়েদ ইসলাম রাতুল আহত হয়েছিল। মা রোকেয়া বেগম ছেলের শিয়রে বসে ৪৮ দিন দুই চেখের পাতা এক করতে পারেননি। মা ভাবত, এই বুঝি ছেলে রাতুল ‘মা’ বলে ডাকবে। মায়ের আর শেষ বারের মতো ‘মা’ ডাক শোনা হলো না।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ৫টায় রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে রাতুল।
রাতুল বগুড়া উপশহরের হাকির মোড়ের বাসিন্দা ছিল। ওখানে সে বাবা, মা ও বড় বোনের সঙ্গে থাকত। উপশহরের পথ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে।
গত ৫ আগস্ট বিকেলে রাতুলের বড় বোন কলেজছাত্রী জেরিন ও ভগ্নিপতি আমির হামজা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেয়। মায়ের বারণ সত্ত্বেও রাতুল নাস্তা না করেই ওদের সঙ্গে গিয়ে স্লোগান দিতে দিতে বগুড়া সদর থানার অদূরে বড়গোলার কাছে পৌঁছায়।
জেরিন জানান, রাতুল তার পাশেই ছিল। হঠাৎ পুলিশের ছোড়া চারটি ছররা গুলি এসে লাগে রাতুলের গায়ে, এর মধ্যে একটি লাগে তার মাথায়। গুলিটি তার বাম চোখের মধ্য দিয়ে মাথার মগজে ঢুকে পড়ে। এরপর পুলিশের ছোড়া আরও অর্ধশতাধিক গুলি লাগে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে অজ্ঞান থাকা অবস্থায় রাতুলকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে চিকিৎসকরা তাকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিওরোসাইন্স হাসপাতালে নিতে বলেন। ৪৮ দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে আজ ভোর ৫টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে কোমল শিশু রাতুল।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় রাতুলের মৃত্যু সংবাদ বগুড়ায় পৌঁছায়। তার মৃত্যুর খবরে উপশহরে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাতুলের মরদেহ বগুড়ায় আনার জন্য তার বাবা, মা, বোন ও ভগ্নিপতি সবাই ঢাকায় হাসপাতালে অবস্থান করছেন।
রাতুলের বড় বোন জেরিন মোবাইল ফোনে বাসসকে জানান, তাদের আশা ছিল যেহেতু মগজ থেকে গুলি বের করতে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেহেতু এ যাত্রা বোধ হয় বেঁচে যাবে তার একমাত্র ভাই রাতুল।
তিনি আরও জানান, আমরা এখনো ঢাকায় হাসপাতালে আছি। আমার মা বারবার মুর্চ্ছা যাচ্ছেন। তাকে সান্ত্বনা দিতে ও লাশ বগুড়া নিয়ে যাবার জন্য ব্যস্ততায় আছি। তাই এই মুহূর্তে আর কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
মুদির দোকানি বাবা জিয়াউর রহমান জানান, আমার সর্বস্ব বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করেছি। তবুও সন্তানকে ফিরে পেলাম না।
এর আগে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বগুড়ার শিশু রাতুল’ এই শিরোনামে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
মন্তব্য করুন