কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

আমেরিকার টাইম টেলিভিশনও হাসিনার রোষানলের শিকার

টাইম টেলিভিশনের লোগো। ছবি : সংগৃহীত
টাইম টেলিভিশনের লোগো। ছবি : সংগৃহীত

ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে দেশ ছাড়াও দেশের বাইরের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে টার্গেট করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। অসংখ্য গণমাধ্যম তার রোষানলের শিকার হয়েছে। সরকারের সমালোচনা বা বিরোধীমতের খবর প্রচার হলেই এসব সংবাদ মাধ্যমের উপর নেমে আসতো হুমকি-ধামকি বা ভয়ভীতির খড়গ। এর সঙ্গে যুক্ত হতো ট্যাগ। সুদুর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির জনপ্রিয় টাইম টেলিভিশনও শেখ হাসিনা সরকারের শ্যান দৃষ্টির শিকার হয়েছিল। বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি অপপ্রচার ছড়িয়েও টাইম টেলিভিশনের কণ্ঠরোধ করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল টাইম টেলিভিশনকে। প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তৎকালীন সরকার প্রধানের যে কোনো অনুষ্ঠানে।

জানা গেছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে তার প্রথম সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে টাইম টেলিভিশন। বিষয়টি সরকারের গোচরীভুত হওয়ার পর পরই টাইম টেলিভিশন এবং এর সিইও আবু তাহেরের বিরুদ্ধে শুরু হয় বিভিন্নমুখী অপপ্রচার। এই সাক্ষাৎকারটি যাতে কোনোভাবেই প্রচার না হয় সেজন্য দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন, ভয়ভীতি প্রদর্শন। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে জাতিসংঘ অধিবেশনের আগে তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি ও পরবর্তীতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন টাইম টেলিভিশনের সিইও আবু তাহেরকে তার অফিসে আমন্ত্রণ জানান। আলোচনার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে কোনো অনুষ্ঠানে টাইম টেলিভিশনকে নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্ত অবহিত করেন।

তাৎক্ষণিকভাবে এর কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, সরকার বিরোধী হিসেবে টাইম টেলিভিশনের ব্যাপারে একটি ধারণার জন্ম হয়েছে। এছাড়াও এর আগের স্থায়ী প্রতিনিধি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন প্রকাশ্যেই এই টেলিভিশনের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র ধারণার বশবর্তী হয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেল ও এর সিইওর বিরুদ্ধে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আবু তাহের সেদিন বেরিয়ে এসেছিলেন। এ সময় সেখানে তৎকালীন প্রেস কাউন্সিলার নুরে এলাহী মিনাও উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে টাইম টেলিভিশনের প্রধান আবু তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গতকাল কালবেলাকে বলেন, ২০১৪ সালে টাইম টেলিভিশনের যাত্রা শুরু করে। তখন থেকেই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এর কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর সঙ্গে হুমকি-ধামকিও দেওয়া হয়। এর বাইরে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিমের ছেলের বিপুল সম্পত্তির খবর প্রচার করেছিল টাইম টেলিভিশন। যা ছিল সরকারি চক্ষুশূলের অন্যতম কারণ। ২০১৯ সাল থেকে টাইম টেলিভিশনকে শেখ হাসিনার যে কোনো অনুষ্ঠানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্নজন আমাকে দেশে যেতে বারণ করেন। মাঝখানে নিউ ইয়র্কের ৬জন স্টেট সিনেটর আমাকে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে নিয়ে যান। কিন্ত সেখানে ডিজিএফআই থেকে ফোন করা হয় আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য। এসব নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমি পরবর্তীতে আর বাংলাদেশ সফরে যাইনি।

তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর আমাদের উপর দেওয়া সরকারি নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে কিনা আমরা জানতে চেয়ে সদ্য বিদায়ী পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে চিঠিও দিয়েছি।

সূত্র জানায়, গত ৩০ আগস্ট পররাষ্ট্র সচিবকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাতে চাই যে, বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্র সফরকালীন সময়ে জনপ্রিয় চ্যানেল টাইম টেলিভিশন এবং সাংবাদিক হিসেবে আমাকে ২০১৯ থেকে তার যেকোনো সভা সমাবেশ, অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্মেলনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। সেই সময়ে আপনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন এবং সেই সিদ্ধান্তের বিষয়টি আপনিই আমাকে ডেকে নিয়ে অবহিত করেছিলেন আপনার কর্মস্থল জাতিসংঘে বাংলাদেশের মিশন অফিসে। কেন এই নিষেধাজ্ঞা? এই বিষয়ে জানতে চাইলে তখন আপনি বলেছিলেন, সরকার বিরোধী হিসেবে আমার বিরুদ্ধে একটি ধারণা সৃষ্ট হয়েছে! সে সময় (আপনার সঙ্গে আলাপকালে) সেখানে বাংলাদেশ মিশনের প্রেস কাউন্সেলর নুর এলাহি মিনা উপস্থিত ছিলেন। আমি প্রশ্ন করেছিলাম প্রমাণ ছাড়া কেবলমাত্র অনুমান বা ধারণা থেকে একজন সাংবাদিক এবং একটি মিডিয়াকে সরকার প্রধানের খবর সংগ্রহ করতে নিষেধ করা কতটুকু গণতান্ত্রিক ও যৌক্তিক? আপনি বলেছিলেন এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় পরিবর্তন আসার প্রেক্ষিতে সেই নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল বা কার্যকর আছে কিনা? বিষয়টি আমাদের জানা প্রয়োজন। আশা করি ব্যাপারটি খোলাসা করে বাধিত করবেন।

সূত্র বলছে, নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে (বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল) চিঠিটি পাঠানো হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ শনিবার বাংলাদেশ সময় রাতেই জবাব পাঠান সচিব। রোববার তিনি সচিব হিসেবে শেষ অফিস করেন।

টাইম টিভির সিইও আবু তাহেরকে পাঠানো শনিবারের বার্তায় বিদায়ী পররাষ্ট্র সচিব লিখেন, "প্রিয় তাহের ভাই আশা করি ভালো আছেন। আমি নিশ্চিত করছি যে, এখন আর সেই বিধি-নিষেধ নেই। মুক্তভাবে সংবাদ সংগ্রহে আপনাকে স্বাগতম।"

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টাঙ্গাইলে এনজিওর হিসাবরক্ষককে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৫

বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু

অপরাধী সন্দেহে কাউকে শাস্তি দেওয়া অপরাধ : শায়খ আহমাদুল্লাহ

আমেরিকার টাইম টেলিভিশনও হাসিনার রোষানলের শিকার

বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস

বগুড়ায় গাছের ডাল ভেঙে ২ জনের মৃত্যু

লঘুচাপ কবে সৃষ্টি হতে পারে জানাল আবহাওয়া অফিস

বগুড়ায় ফের পটকা তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণ

চাঁদাবাজি মামলায় ছাত্রলীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার

পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরির সুযোগ দেব না : তথ্য উপদেষ্টা

১০

সহিংসতার ঘটনায় বিশিষ্ট ৪৫ নাগরিকের বিচারের দাবি

১১

রান্নাঘরে ২ ঘণ্টা নারীকে জড়িয়ে রাখল অজগর

১২

‘মানবরচিত মতবাদ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে না’

১৩

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাক্ষাৎ 

১৪

রাশিয়ার দুই অস্ত্র ভাণ্ডারে হামলার দাবি ইউক্রেনের

১৫

‘চাকরির বাজারে সেরা প্রমাণে নিজেদের যোগ্য করে তুলতে হবে’

১৬

পল্টন থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল

১৭

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল / বাইরে ফিটফাট ভেতরে ‘সদরঘাট’

১৮

শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : জয়নুল ফারুক

১৯

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

২০
X