রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নাসির (৩০) ও মুন্না (২২) নামে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নাসির ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নাসিরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুন্নাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মৃত্যু হয়।
নিহত মুন্নার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা এলাকায়। তবে তিনি নানীর পরিবারের সঙ্গে মোহাম্মদপুরের শঙ্করে থাকতেন। বাবার নাম বাবুল। মুন্নার আড়াই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। অন্যদিকে নাসির মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বালিগ্রামের শাহ আলম বিশ্বাসের ছেলে। রায়েরবাজার বারৈইখালী এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রায়ের বাজার এলাকার কিশোর গ্যাং লিডার এলেক্স ইমনের নেতৃতে দেড় শতাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য কবরস্থানের ভেতর থেকে তিন চারজনকে ধরে নিয়ে যায় আজিজ খান রোডে। এ সময় তিনজনকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।
কিশোর গ্যাং চক্রের মূলহোতা এলেক্স ইমন এই এলাকায় চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তার চক্র এর আগেও বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। সম্প্রতি র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করে পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে রেখেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী শাওন আহমেদ বলেন, আমি আর নাসির দুজনই মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলাম। আমি সাদেক খান আড়তে যাব এবং সে তিন রাস্তার মোড়ে যাবে। আমাকে বলল ভাই আমাকে একটু তিন রাস্তার মোড়ে নামায় দেন। পরে সাদেক খান আড়তের সামনে থেকে তিন রাস্তার মোড়ে যাওয়ার সময় দেখি ধারালো অস্ত্র নিয়ে একটি গ্রুপ দৌড়াদৌড়ি করছে। তারা হুট করে পেছন থেকে এলোপাথাড়ি কোপানো শুরু করে নাসিরকে। পরে নাসির মোটরসাইকেল থেকে নেমে দৌড় দিলে তাকে ধরে মাটিতে শুয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে এবং বলতে থাকে জবাই করে দে। পরে তাকে জবাই করতে গেলে আমি একজনকে ধরে ফেলি এবং দুজনেই পড়ে যাই। এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে তারা পালিয়ে যায়। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা যায় নাসির।
তিনি আরও বলেন, আমরা যাওয়ার সময় ওইখানে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলছিল। কী কারণে দুই গ্রুপে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া চলছিল সে বিষয়টি বলতে পারি না। সে রাজমিস্ত্রির কাজও করতো।
ঢামেক হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পের এসআই মাসুদ আলম বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জরুরি বিভাগের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে মারা যায় সে। আমরা বিষয়টি মোঃপুর থানা পুলিশকে জানিয়েছি। মরদেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান বলেন, মোহাম্মদপুরের বুদ্ধিজীবীর সাদেক খান আড়তের পাশে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে মুন্না ও নাসির নামে দুইজন নিহতের খবর পেয়েছি। এদের মধ্যে মুন্না সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মারা যায় এবং নাসির ঢাকা মেডিকেলে মারা যায়। মুন্নার নামে মারামারি ও কোপাকুপিসহ সাত থেকে আটটি মামলা রয়েছে এবং নাসিরের বিষয়ে এখনো তথ্য পায়নি। নাসিরের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কি কারণে এই হত্যকাণ্ড দুটি সংঘটিত হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
মন্তব্য করুন