বৈষম্যহীন নগর গড়ে তোলার বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্যই হলো সকল প্রকার বৈষম্য ও বঞ্চনা দূর করা। তাই সকলের প্রত্যাশা অন্তর্বর্তী সরকার শহর ও নগরের ধনী ও বস্তিবাসীর মধ্যে যে অন্যায্য বৈষম্য বিদ্যমান তা দূর করে সকলের জন্য একটি বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গড়ে তুলবে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সবার জন্য চাই বৈষম্যহীন নগর, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ সব কথা বলেন বক্তারা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর (কাপ) আয়োজিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাপের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান ইয়াত।
গবেষক পাভেল পার্থের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) কার্যকরী সভাপতি ডা. লেলিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আদিল মুহম্মদ খান, নারী অধিকারকর্মী কাজী সুফিয়া আখতার, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক মিহির বিশ্বাস, জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলনের সদস্য সচিব রুস্তম আলী খোকন, গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক কিউরেটর আমিরুল রাজিব, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, বস্তিবাসী অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপ্রধান হোসনে আরা বেগম রাফেজা প্রমুখ।
সভায় উত্থাপন করা ধারণাপত্রে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী নগরায়ন ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। নগরিগুলো অর্থনীতির রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু ও জাতির সামাজিক কাঠামো তৈরির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এই সুবিধাগুলোর পাশাপাশি নগর এলাকায় বৈষম্য, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং সামাজিক বঞ্চনা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে, যা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। তাই অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে, বৈষম্যহীন নগর গড়ে তুলতে সকলকে দায়িত্বশীল হতে হবে। একইসঙ্গে সামগ্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে অন্তভর্‚ক্ত করতে হবে।
সভায় উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ বস্তিবাসীদের জন্য নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব আবাসন বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ভাষানটেকের অসমাপ্ত বিল্ডিংগুলো সমাপ্ত করে তা প্রকৃত বস্তিবাসীদের বরাদ্দ দিতে হবে। নগরের যে কোন উন্নয়ন পরিকল্পনায় নগরের সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। সকলের জন্য পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাম ও নগরের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচী বৈষম্য দুর করতে হবে। নগর দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে আয়বর্ধনমূলক কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ ও সকল প্রকার দূষণ বন্ধ করতে হবে।
মন্তব্য করুন