বিগত ১৫ বছরের বেশি সময়ে পরিবহন সেক্টরে যাত্রী স্বার্থের সিদ্ধান্তগুলো বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের গুটিকয়েক নেতাদের প্রেসক্রিপসনে নেওয়া হতো বলে অভিযোগ করেছে যাত্রী অধিকার আদায়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সে সঙ্গে লুটপাটের উদ্দেশ্যে যোগাযোগে একের পর এক মেগা প্রকল্প নেওয়ারও অভিযোগ সংগঠনটির। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে যাত্রী অধিকার দিবসের আলোচনা সভায় সংগঠনের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষে ‘বিগত সরকারের প্রণীত সড়ক আইনে যাত্রী স্বার্থ উপেক্ষিত’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। উল্লেখ্য যে, যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য, পরিবহনে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, সড়ক দুর্ঘটনা, অন্যায্য ও অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দাবি আদায়ের প্রতীকী দিবস হিসেবে বাংলাদেশে ৬ষ্ঠ বারের মতো এই দিবসটি পালিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে পরিবহনে বৈষম্য দূর করতে পরিবহন পরিচালনা ও সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সমাজের বিশিষ্টজনরা। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবহনে বিশৃংঙ্খলা ও নৈরাজ্য থামছে না। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সর্ববৃহৎ ছাত্র আন্দোলনের পরে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সড়ক পরিবহনের নতুন আইন বাস্তবায়ন হলেও পরিবহনে বিশৃঙ্খলা কেবল বাড়ছেই। ধারাবাহিকভাবে চার মেয়াদে ১৫ বছর ওবায়দুল কাদের সড়কমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেও দেশের মানুষকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে শান্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন এ কথা উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল বলেন, যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষের সংকটকে পুঁজি করে বিগত ১৫ বছরে দেশের সড়ক যোগাযোগে উন্নয়নের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য নেওয়া হয়েছে একের পর এক মেগা প্রকল্প, উদেশ্য ছিল মেগা লুটপাট। পরিবহনে মালিক-শ্রমিক নেতাদের তোষামোদি করার মাধ্যমে যাত্রীদের পকেট কাটার নৈরাজ্য চলেছে। চাঁদাবাজির নামে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা চাঁদাবাজির অংশীদার থাকায় কোনো প্রতিবাদ করা যায়নি। এই বৈষম্য দূর করতে হলে, পরিবহন আইন সংশোধন করে যাত্রী ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যাত্রী সাধারণের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের কোনো উপায় ছিল না এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, পরিবহন সেক্টরে যাত্রী স্বার্থের সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হতো বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের গুটিকতক নেতাদের প্রেসক্রিপসনে। ফলে রাজধানীর কোনো বাসে একজন ভদ্রলোকের সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে যাতায়াতের পরিবেশ নেই। সিটি সার্ভিসগুলোর কোনো বাসের আসনে বসা যায় না। পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বালাই নেই। সিট ভাঙা, দরজা-জানালা ভাঙা, বাসের চলটা উঠে গেছে বহুযুগ আগে। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়-ঝক্কড় বাস উচ্ছেদের নামে নানা তালবাহানা, নানান আশ্বাস, নানান কমিটি করে মিডিয়ার সামনে আইওয়াশ করত তৎকালীন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমম্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন