অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ভারতসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। তবে সেই সম্পর্ক ন্যায্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে হওয়ার কথা বলেছেন।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, যে সমস্ত দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমার টেলিফোনে যোগাযোগ হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। আমরা ভারতসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই।
ভারতের সঙ্গে এরইমধ্যে বন্যা মোকাবিলায় উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আলোচনা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সার্ক রাষ্ট্র গোষ্ঠী পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।
আমরা চাই দেশ যেন গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে সম্মানের সঙ্গে পরিচিত হয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের পরিকল্পনা যেন দেশের মানুষকেন্দ্রিক হয়, কোনো নেতা বা দলকেন্দ্রিক না হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের অহেতুক কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে দেখেছি, যেগুলো কখনোই দেশের মানুষের জন্যে ছিল না বরং এর সঙ্গে জড়িত ছিল কুৎসিত আমিত্ব এবং বিশাল আকারের চুরি। চলমান এবং প্রস্তাবিত সব উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর যাচাইবাছাইয়ের কাজ শুরু করেছি।
দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান টেলিফোনে এবং শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনাররা সাক্ষাৎ করে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছেন। আমার অনুরোধে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৭ জন বাংলাদেশি, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন, তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে সে দেশের সরকার। তাদের কয়েকজন দেশে ফিরেছেন। এই ক্ষমা প্রদর্শন ছিল অতি বিরল একটি ঘটনা। এজন্য আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি।
এর আগে, গত ২৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর ৬ আগস্ট বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর গত ৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ড. ইউনূস।
শপথ নেওয়ার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও তার সদস্যরা নিজ নিজ কর্তব্য পালন করার মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে উপভোগ করবেন। দেশকে গৌরবের শীর্ষে নিয়ে যাবেন।’
মন্তব্য করুন