স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিনসহ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যের শিকার চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৮ দফা সুপারিশও তুলে ধরেছেন।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসন এবং বৈষম্যের শিকার চিকিৎসক কর্মকর্তাদের প্রতি পুনরায় বৈষম্য ও হয়রানির ঘটনা। জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্র আন্দোলনে মেডিকেল সেক্টরের ছাত্র, চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও স্বাস্থ্যকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এ আন্দোলনে ডা. সজীব সরকার শহীদ হয়েছেন এবং অনেক ছাত্র, ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও স্বাস্থ্যকর্মী আহত হন। কিছু চিকিৎসক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও স্বাস্থ্যকর্মী গ্রেপ্তার হন এবং অনেকেই ফ্যাসিস্ট সরকারের ভয়ে নিরাপদে থাকতে পারেননি। সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তারা ছাত্রদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। ফ্যাসিবাদের দোসররা বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে বাধা দিয়েছে। লাশের সংখ্যা গোপন করেছে, যার কারণে অসংখ্য ছাত্র-জনতার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়েছে। তারা বলেন, তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. রোবেদ আমিন, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হারুনুর রশিদ, লাইন ডিরেক্টর ডা. নাজমুল ইসলাম মুন্না, নিপসমের পরিচালক ডা. সামিউল ইসলাম সাদিসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরকারি হাসপাতালে আহত ছাত্রদের চিকিৎসা প্রদান করতে বাধা সৃষ্টি করেছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে ছাত্রলীগের পেটুয়া বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রমে বাধা দিয়েছে। এমনকি নিহত ছাত্র-জনতার লাশের সংখ্যা গোপন করা হয়েছে এবং লাশগুলোকে সরকারকে দিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে সাহায্য করেছে। অথচ নতুন সরকারের অধীনে তারা আবারও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়েছে। এ সময় তারা ৮ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমীন (মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর), ডা. ফজলে রাব্বি (পরিচালক, প্রশাসন) এবং অন্য সুবিধাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ আদেশ বাতিল করতে হবে। যারা আহত ছাত্র-জনতাকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেছে, তাদের তালিকা প্রণয়ন করে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে। শান্তি সমাবেশে যোগদানকারী এবং ফ্যাসিবাদের দোসর সব চিকিৎসক ও কর্মকর্তা/কর্মচারীকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈষম্যের শিকার সব চিকিৎসক ও কর্মচারীদের দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে বৈষম্য দূর করতে হবে। পদোন্নতির ব্যবস্থা দ্রুত করা হলে স্বাস্থ্য প্রশাসন ঢেলে সাজানো সম্ভব হবে। তারা আরও বলেন, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে এবং দুর্নীতি সম্পর্কিত একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজসহ অন্য প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচারের দোসরদের সরিয়ে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের পদায়ন করতে হবে। প্রতিবাদকারী চিকিৎসকদের হয়রানিমূলক বদলি আদেশ বাতিল করতে হবে এবং ভবিষ্যতে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের হয়রানিমূলক বদলি করা যাবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার ও চিকিৎসাসেবার গুণগতমান উন্নয়নের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিটি বাতিল করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিত্ব রেখে কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং সেবক-সেবিকাদের মধ্যে যাদের হয়রানি ও নির্যাতনমূলক বদলি এবং পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে পদায়ন করতে হবে।
ডা. মাহাবুব আরেফিন রনজূর পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বৈষম্যের শিকার চিকিৎসক ডা. মো. ফারুক হোসেন এবং ডা. জিয়াউল করিম। দাবি পেশ করেন ডা. আশরাফি এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বৈষম্যের শিকার চিকিৎসক ডা. মেহেদী হাসান।
মন্তব্য করুন