ক্ষমতার অপব্যহার করে চারবছরে তিন পরিবহন নেতা ৬ হাজার ৯৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন।
সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন দুদকে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত এ অভিযোগ দায়ের করেন।
এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শ্রম আইন ও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোকলেছুর রহমান পরিবহন সেক্টর থেকে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছেন। অভিযুক্তদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে এই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ারও দাবি জানান হানিফ খোকন।
অভিযোগে বলা হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে পরিবহন চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। ঢাকার টার্মিনাল থেকে একটি গাড়ি বের হলে ১২০০ টাকা, প্রতিটি হিউম্যান হলার থেকে ৮০০ এবং অটোরিকশা থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হতো। এই অর্থ আদায় করত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৪৯টি বেসিক ইউনিয়ন।
মহামারি করোনা মোকাবিলায় ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে সরকার লকডাউন ঘোষণা করে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ২০২০ সালের এক জুন থেকে স্বল্প পরিসরে সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। তৎকালীন পুলিশ প্রধান পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে করা বৈঠকে চাঁদাবাজি না করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, টার্মিনালগুলো থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্ধারিত ইজারা ফি আদায় করা যাবে। এর বাইরে সব প্রকার টাকা তোলা বন্ধ থাকবে।
বৈঠকের পর ফেডারেশনের নেতারা চাঁদাবাজির নতুন কৌশল ঠিক করেন। এরি ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শাজাহান খান ও ওসমান আলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, তাদের অন্তর্ভুক্ত বেসকি ইউনিয়ন গাড়ি প্রতি ৫০ টাকা হারে সার্ভিস চার্জ আদায় করতে পারবে। এরমধ্যে ফেডারেশন পাবে ১০ টাকা। যা ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। ১১ ধরনের আট লাখ ৫৭ হাজার যান্ত্রিক পরিবহন থেকে এই চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে দুদকে জমা দেওয়া চিঠিতে। সব মিলিয়ে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১৪২১ দিনে ছয় হাজার ৯৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ৬৫০ টাকা অবৈধ চাঁদাবাজি করা হয়েছে।
হানিফ খোকন বলেন, শাজাহান খান, ওসমান আলীসহ মোকলেছুর রহমান গংরা গত ১৬ বছরে পরিবহন সেক্টর থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে। ২৪৯টি ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ তাদের পরিবার পরিজনের সম্পত্তির হিসাব নিলেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে।
অভিযুক্তদের সম্পদের বিবরণ তুলে ধরে হানিফ খোকন বলেন, চাঁদার অর্থে সবাই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। অবৈধভাবে আদায় করা অর্থ তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা জমা করার কথা আবেদনে উল্লেখ করেছেন বলে জানান এই পরিবহন নেতা।
সেসঙ্গে ২০১২ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে ২৬৯৬টি মিশুকের পরিবর্তে অটোরিকশা প্রতিস্থাপনের অনুমতি নিয়ে শাজাহান খানের নাম ভাঙিয়ে ওসমান আলীসহ মোখলেছুর রহমান বিপুল অর্থের বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ করেন হানিফ খোকন।
মন্তব্য করুন