ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বিরোধিতা করা থেকে শুরু করে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতসহ এ দেশের জনসাধারণের প্রাণের সব বিষয় নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র দেখা যাচ্ছে। একটি ধর্মান্ধ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মূল সুরকে বিকৃত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
শুক্রবার (০৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের আয়োজনে উদীচী চত্বরে (জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীতে) ‘উন্মুক্ত স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত গাওয়া কর্মসূচি’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এই হীন চক্রান্তের প্রতিবাদ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের রুখে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে দেশের সর্বত্র একযোগে ‘উন্মুক্ত স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত গাওয়া কর্মসূচি’ পালন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। উদীচীর প্রায় সব জেলা ও শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ একসঙ্গে প্রাণের আবেগে গেয়ে ওঠেন লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় সংগীত।
কর্মসূচির শুরুতেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত কারো দানে পাওয়া না, এটা আমরা অর্জন করেছি ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে। আজকে উদীচী সারা দেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশন কর্মসূচি পালন করছে। প্রয়োজন হলে অন্য সাংস্কৃতিক সংগঠন বা ব্যক্তিকে একত্রিত করে বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেবে।
জাতীয় সংগীত ও সংগঠন সংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এ সময় সমাবেশস্থলে উপস্থিত সবাই তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। এরপর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অমর গণসংগীত পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, মাগো ভাবনা কেন এবং তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর গান তিনটি সমবেতভাবে পরিবেশন করা হয়।
এছাড়া বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনের পর একটা স্বার্থান্বেষী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের মূল সুরকে নস্যাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত। উদীচী এই ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ ও রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। আমরা কোনোভাবেই আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ হতে দিতে পারি না।
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, কেউ কেউ জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি সংবিধানকে পরিবর্তনের কথা বলছেন। সময় পরিক্রমায় সংবিধানে নতুন কিছু ধারা যুক্ত হতে পারে। কিন্তু যারা এটিকে পরিবর্তন বা পুনর্লিখনের কথা বলছেন আমরা তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
দেশের যে কোনো সংকটে উদীচীর কর্মীরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে রাস্তায় থেকেছে জানিয়ে অমিত রঞ্জন দে আরও বলেন, এখনো যে কোনো ধরনের আঘাত আসুক না কেন বা মানুষের স্বার্থবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড সংগঠিত হলে উদীচী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তার সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে আয়োজন ছাড়াও রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, যশোর, সুনামগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বেশিরভাগ জেলায় উদীচীর উদ্যোগে উন্মুক্ত স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মন্তব্য করুন