বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সকল চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে সারা দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন ধাপে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিতে সংস্কার ও রিফর্ম করার বিষয়ে একমত হয় বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ।
সবশেষ গত ২৭ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুরোধে এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের শর্তে গণছুটি ও গণপদত্যাগ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন, ২০১৩ এর কিছু ধারা সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনরত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি যে চাকরিবৈষম্য দূরীকরণসহ ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি পূরণে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। সেই বৈঠকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি পূরণে অঙ্গীকার করা হলেও বিদ্যমান সংকট নিরসনে বিদ্যুৎ বিভাগ ও আরইবি উদাসীন হয়ে শুধুমাত্র কালক্ষেপণই করছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় আরইবি কর্তৃক ‘বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন, ২০১৩’ এর ধারা ২(৬), ৮(১) ও ২৯ প্রতিস্থাপন, ধারা ২৬ সংশোধন এবং ধারা ৩(৩), ৬(প), ২৪(৩) ও ৩৩(৩) নতুন সংযোজনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে এবং বিদ্যুৎ বিভাগও বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। পবিস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন, বিদ্যুৎ বিভাগ আরইবির প্রস্তাবনা অনুযায়ী আরইবি অ্যাক্ট-২০১৩ এ যেসকল ধারা পরিমার্জন বা সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছে তা পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমে আরইবিকে তাদের যে কোনো কৃতকর্মে্র দায়মুক্তির সনদ হিসেবে কাজ করবে এবং সরকারের নিকট আরইবির কোনো জবাবদিহিতা থাকবে না। যা ক্যাপাসিটি চার্জ নামক লুটেরা মডেলকে দায়মুক্তি দেওয়া আইনের সমতূল্য। বর্তমান সংকটকালীন সময়ে আরইবি এবং বিদ্যুৎ বিভাগের এমন উদ্যোগে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মনে তীব্র ক্ষোভ এবং চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এমতাবস্থায়, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে উক্ত আইন সংশোধন/ সংযোজনী কার্যক্রম বাতিলের লিখিত বিজ্ঞপ্তি এবং বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক গঠিত রিফর্ম কমিটির সুপারিশমালা প্রস্তুত করা না হলে কোনোরকম পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই পূর্বাপেক্ষা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা ও পালন করা হতে পারে বলেও সতর্ক করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এতে সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটলে তার দায়ভারও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, আরইবির আচরণ সংলাপের নামে প্রহসন ও কালক্ষেপণের নামান্তর। সংলাপের নামে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঘুমে রেখে অন্তরালে আরো কঠোর বৈষম্যমূলক আইন পাশের দুরভিসন্ধি করছে আরইবি।
বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি বিদ্যুৎ। মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে টেকসই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণ প্রথম এবং প্রধান শর্ত। আরইবি কর্তৃক সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্ন-মানের বৈদ্যুতিক মালামাল ক্রয় করে ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো নির্মাণপূর্বক গ্রাহক ভোগান্তি সৃষ্টি, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত জটিলতা এবং পলিসি প্রণয়ণে অদক্ষতা ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ৪৭ বছর ধরে চলমান শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে নেমেছে। অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি মেনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
মন্তব্য করুন