শিশুশ্রম নিরসনে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
সোমবার (১২ জুন) রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান তারা।
বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ওই আলোচনা সভা ছাড়াও মানববন্ধন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি), শাপলা নীড় এবং এড়ুকো-বাংলাদেশ।
তারা বলেন, শুধু ঢাকা শহরেই দেড় লাখের বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। শিশুশ্রমের অন্যতম প্রধান কারণ দারিদ্র্য ও বৈষম্য। তাই শিশুশ্রম বন্ধে দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে হবে। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
এএসডির নির্বাহী পরিচালক এম এ করিমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. বেল্লাল হোসেন শেখ, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তাবাকো উচিয়ামা, সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, উন্নয়ন কর্মী মিজানুর রহমান, এএসডির প্রকল্প কর্মকর্তা গুল-ই জান্নাত জেনী প্রমুখ।
সভায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, ২০১৬ সালের পহেলা মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে কর্মরত শিশুর সংখ্যা সাড়ে ৩৪ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ১৭ লাখ শিশু রয়েছে, যাদের কাজ শিশুশ্রমের আওতায় পড়েছে। কর্মরত শিশুদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে ১২ লাখ ৮০ হাজার। আর ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অতিঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। তবে বাস্তবে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।
সভায় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক বেল্লাল হোসেন বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে শিশুশ্রম মুক্ত করতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শ্রম মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছে। এর বাইরে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থা শিশুশ্রম বন্ধে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও এখনো শিশুরা কৃষি, কলকারখানা, গণপরিবহন, আবাসন, খাবারের দোকান, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইটভাটা এবং নির্মাণ খাতে কাজ করছে। দারিদ্র্য ও বৈষম্যের কারণে অনেকেই শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই শিশুশ্রম বন্ধ হলে দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রসার বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন এএসডির চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের শিশুরা। এর আগে সকালে শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে মানববন্ধনে ‘শিশু শিক্ষাকে হ্যাঁ বলুন, শিশুশ্রমকে না বলুন এবং শিশু নির্যাতন বন্ধ করুন’সহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত পোস্টার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
মন্তব্য করুন