অবশেষে গুঞ্জনের সমাপ্তি টেনে আজ পদত্যাগ করতে পারেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টম্বর) দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য কমিশনাররা পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। ইসির একাধিক সূত্র পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইসি সূত্র জানায়, কোনো কিছুর ব্যত্যয় না ঘটলে আজই কমিশনের পদত্যাগের ঘোষণা আসবে। পদত্যাগের জন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন কমিশনাররা। গতকাল বুধবার সিইসিসহ চার কমিশনার নির্বাচন কমিশনে অফিস করেছেন। সেখানে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেছেন তারা। ওই বৈঠক থেকেই পদত্যাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
তবে গতকাল সারা দিন সাংবাদিকরা নানা বিষয়ে জানতে চাইলেও কোনো কমিশনার পদত্যাগের বিষয়ে মুখ খোলেননি। সিইসি অফিস থেকে বের হওয়ার সময় তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘নো কমেন্টস। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করব, তখন বিস্তারিত জানাব। ’রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কখন দেখা হবে—এমন প্রশ্নে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কালই (আজ) দেখা হবে। আপনাদের সবকিছুই জানাব কাল (আজ)।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক রদবদল চলছে। পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে সব সেক্টরেই। রাষ্ট্রসংস্কারের চলমান প্রেক্ষাপটে কেউ স্বেচ্ছায়, আবার কেউ বাধ্য হয়ে পদত্যাগপত্রে সই করছেন। এ থেকে বাদ যায়নি বিচারাঙ্গনসহ বড় বড় স্বায়ত্তশাসিত এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইসি পুনর্গঠনের বিষয়টিও জোরেশোরে আলোচনা চলছিল গত কয়েকদিন। এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি পত্রিকায় একটি কলাম লিখে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। কলামে তিনি ‘অসাংবিধানিক উপায়ে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে’ বলে সমালোচনা করেন। পাশাপাশি হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া বর্তমান সরকারের কোনো কোনো কর্মকাণ্ডেরও সমালোচনা করেন সিইসি।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজেদের অবস্থান ও করণীয় জানতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে দেখা করার বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে আউয়াল কমিশন। আর সরকারের সাড়া না পেয়েই সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কলাম লিখে সরকার বা জনগণকে তাদের নিজেদের অবস্থান জানানোর চেষ্টা করেছেন। সেখানে তিনি নিজেও দাবি করেন, আলোচনার জন্য কোনো লোক না পাওয়ায় তিনি পত্রিকায় কলামের মাধ্যমে বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
সিইসির এ কলাম নিয়ে বেশ তোলাপাড় শুরু হয়। গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে থেকে সংসদ ভাঙা নিয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করায় সিইসি পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া সিইসি পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বলে মনে করছিলেন অনেকে। তবে আউয়াল কমিশন যে সরে দাঁড়াতে যাচ্ছে, এই কলাম তার পূর্বপ্রস্তুতি বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।
এদিকে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল ইসি সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রজনতা। তারা বর্তমান কমিশনকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন।
মন্তব্য করুন