চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়েছিল চীন। বর্ষা মৌসুমের আগে পাইলট প্রত্যাবাসন সফল করতে চেয়েছিল তারা। তবে সব আয়োজনের মাঝে বেঁকে বসে রোহিঙ্গারা। বর্ষার পর আবারও সেই প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে পাইলট প্রত্যাবাসন সফল করতে চায় বেইজিং।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশে বিক্ষোভ নিয়ে বিবৃতি দিল অ্যামনেস্টি
গত রোববার ঢাকা সফরে এসেছেন চীনের এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত দেং সিজুন। সোমবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রত্যাবাসন নিয়ে। আলোচনায় অগ্রাধিকার পেয়েছে পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ১৭৬ রোহিঙ্গাকে দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়।
আরও পড়ুন : পালকি পাঠিয়ে কাউকে নির্বাচনে আনব না : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, চীন এ অঞ্চলে সফলতা দেখাতে চায়। ইরান ও সৌদি আরবকে মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যে সফলতা দেখিয়েছে তাদের কূটনীতির এ সফলতা দক্ষিণ এশিয়াতেও দেখাতে চায়। বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার ওপর পশ্চিমা যে চাপ বাড়ছে, তাতে এখানকার বন্ধু রাষ্ট্রগুলো কূটনীতিতে চীনের সফলতা দেখতে চায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সেই সফলতা এনে দিতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশও দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায়। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প সফল করা যায়, তাহলে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা রাজনীতির মাঠে এগিয়ে থাকবে। বাংলাদেশে আসার আগে মিয়ানমার ঘুরে এসেছেন চীনের দূত। মিয়ানমারও প্রত্যাবাসনে রাজি।
আরও পড়ুন : ‘আন্দোলন দেখলে ভয় পাবেন না’
মিয়ানমারের সরকারি মুখপত্র নিউ গ্লোবাল লাইট জানিয়েছে, গত শুক্রবার চীনের বিশেষ দূত দেং সিজুন মিয়ানমারের সেনাশাসক জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লায়েংয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। আলোচনায় মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনের সহযোগিতার পাশাপাশি রাখাইন থেকে চলে যাওয়া ‘প্রবাসীদের’ ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এদিকে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ নেই। এ কারণে প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করে আসছে তারা। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগকে ‘প্রতারণামূলক ও জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ’ উল্লেখ করে অবিলম্বে স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা-ঢলের মাত্র তিন মাসের মাথায় অনেকটা চীনের চাপে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছিল। ওই সময় একাধিকবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেছিলেন চীনের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। নেপথ্যে চীন থাকলেও তখন বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয়ভাবে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সমঝোতা স্মারক সইয়ের সময় ওয়াং ই নেপিডোতে অবস্থান করছিলেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নিবন্ধিত ৯ লাখ ৬০ হাজার ৫৩৯ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এদের মধ্যে পুরোনো নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৬৬।
মন্তব্য করুন