বাংলাদেশের মানুষের কষ্টার্জিত মানবাধিকার মজবুতে সহায়তা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ এ আহ্বান জানায়।
সংস্থাটির সহযোগী পরিচালক (ইইউ অ্যাডভোকেসি) ক্লাউডিও ফ্র্যান্সাভিল্লা বলেন, ‘বিগত মাসগুলোতে বাংলাদেশের মানুষ অসীম বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নয়নের জন্য লড়াইয়ে তারা চড়া মূল্য দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, তাদের সমর্থন করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া ইইউ’র দায়িত্ব। ক্লাউডিও বলেন, কয়েক সপ্তাহের টানা আন্দোলনের ফলে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে এক স্বৈরাচারী সরকারব্যবস্থার পতন হয়। তিনি বলেন, এবারের আন্দোলন দমনে দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের ভয়াবহতম নৃশংসতা দেখা গেছে। সংঘর্ষে শত শত মানুষ নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
ক্লাউডিওর মতে, প্রধান উপদেষ্টা কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন। সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনায় ও বিভিন্ন রকম অবিচারের শাস্তি নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। কিন্তু ড. ইউনূসের সফলতা নির্ভর করবে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পদক্ষেপের ওপর।
বাংলাদেশ ইইউ-এর ‘এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ)’ সুবিধার আওতাভুক্ত। এর কারণে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বিনা শুল্কে রপ্তানির সুযোগ পেয়ে আসছে দেশটি। তবে এই সুবিধার পূর্বশর্ত হচ্ছে মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা।
ক্লাউডিও বলেন, আগের সরকারের অনেক কাজ ছিল এসব শর্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী ধাপে বাংলাদেশের উত্তরণ নিশ্চিত করতে ইইউর পক্ষ থেকে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য ইইউর কাছে ৩টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। তার প্রথম সুপারিশ হচ্ছে, আসন্ন জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সভায় সম্প্রতি সংঘটিত গুরুতর অপরাধগুলোর তদন্ত ও জবাবদিহিতার জন্য ইইউর উচিত দেশটিকে সমর্থন করা। পাশাপাশি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগে জর্জরিত বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব বিলুপ্ত করতে বাংলাদেশের উচিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। তৃতীয় ও সর্বশেষ সুপারিশ হচ্ছে, নিরাপত্তা খাত সংস্কারে ‘ইবিএ’-এর শর্তানুযায়ী মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশে বিনাবিচারে আটক সবার মুক্তি নিশ্চিতসহ অন্যান্য অবিচারের সমাধান করতে হবে।
এসব পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশির মানবাধিকার সুসংহত করতে ইইউ সহযোগিতা করতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।