ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে সম্প্রতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। যেখানে পদ সংখ্যা ২০৯ জন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওই বিজ্ঞপ্তির তথ্য হালনাগাদ না করা, মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা বহালসহ বেশকিছু অসঙ্গতি দেখা গেছে। এমনকী রহস্যজনকভাবে সেখানে মুজিবনগর ‘কোটা’ নামে অপশন রয়েছে। প্রার্থী আনসার/ভিডিপি কিনা সেটাও জানতে চাওয়া হয়েছে আবেদনপত্রে। অন্তত ১০টি জেলার প্রার্থীদের আবেদনে না করা হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে তৎকালীন সরকার। তবে সেখানে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখা হয়। তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন কোটা উল্লেখ রয়েছে এবং অনলাইন আবেদন ফর্মটিও হালনাগাদ করেনি সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ২০৯ সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর। গত ৯ জুন প্রকাশ করা ওই বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৮ জুলাই। পরে আবেদনের সময় বৃদ্ধি করে ৩ সেপ্টেম্বর করা হলেও তারা বিজ্ঞপ্তিটি হালনাগাদ করেনি। এমন কি অনলাইন আবেদন ফর্মে রাখা হয়েছে রহস্যজনক ‘কোটা’ অপশন। কোটা সংশোধনের পরও বিভিন্ন অপশন থাকায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা গেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভাপতি ও পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সৈয়দ মো. নুরুল বাসির স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো স্বীকৃত বোর্ড হইতে অন্যূন দ্বিতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৫ বৎসর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য। তবে রাজবাড়ী, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, মাগুরা ও ঝালকাঠি জেলার প্রার্থী ছাড়া সব জেলার প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। তবে সারা দেশের সব জেলার এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটার প্রার্থীরা এ পদে আবেদন করতে পারবে।
আবেদনের পদ্ধতি ও শর্তাবলীর ১ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, নিয়োগের জন্য আবেদনকারী সাধারণ প্রার্থীদের বয়স ১২/০৬/২০২৪ তারিখে ১৮-৩০ বছর এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পুত্র-কন্যাগণের ক্ষেত্রে বয়স ১৮-৩২ বছর। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যাগণের বয়স ১৮-৩০ বছর। শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য বয়স ১৮-৩১ বছর। বয়সের ক্ষেত্রে এফিডেভিট গ্রহণযোগ্য নয়।
৫ নং পয়েন্টের ক (১)-এ বলা হয়েছে, অনলাইন এ আবেদনপত্র পূরণ ও পরীক্ষার ফি জমাদান শুরুর তারিখ ও সময় ১২/০৬/২০২৪ সকাল ১০টা। (২)-এ বলা হয়েছে, অনলাইনে আবেদনপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ও সময় ১৮/০৭/ ২০২৪ রাত ১১টা ৫৯টা পর্যন্ত। উক্ত সময়সীমার মধ্যে ইউজার আইডিপ্রাপ্ত প্রার্থীগণ পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এসএমএসে পরীক্ষার ফি জমা দিতে পারবেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) পদের ওই অনলাইন বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ৯ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ আর আবেদনের ডেডলাইন ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত দেখানো হয়েছে। কিন্তু তাদের ওয়েবসাইটে সংশোধিত কোনো বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি।
অনলাইন আবেদন ফর্মে গিয়ে দেখা যায়, ওই পদে প্রার্থীর বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেখানে শারীরিক প্রতিবন্ধী, আনসার/ভিডিপি কোটার চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটার অপশনে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনির চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়াও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, এতিম কিনা সেটাও জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে একই আবেদনে মুজিবনগর নামে একটি অপশন যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে হ্যাঁ অথবা না নামের অপশন রয়েছে।
এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল কালবেলাকে বলেন, আগের যে ফরম্যাটটা যেভাবে আছে টেলিটকের দেওয়া, ওইভাবেই সরবরাহ করা আছে। এখন পরিবর্তন করে টেলিটকের সঙ্গে সব কিছু নতুন করে আপডেট করা দরকার ছিল। ফলে আগামীতে সংস্করণ নতুনভাবে করা হবে। যে বিষয়গুলো আছে, আগামীতে করা হবে। যেগুলো আপনি বলছেন এগুলো করলে একেবারে আপডেট সুন্দরভাবে হবে। সব কিছু হালনাগাদ করে শুরু করতে গেলে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যেত না। এখানে প্রত্যেককে বলে দেওয়া হয়েছে, নতুন যে কোটার সার্কুলার হয়েছে সে অনুযায়ী সব জেলার লোকেরা সমান সুবিধাপ্রাপ্ত হবে, এটা ক্লিয়ার করা হয়েছে।
কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনে যা আছে:
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনার আলোকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডেই (৯ম থেকে ২০তম) ৭ শতাংশ কোটা রেখে বাকি ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেবে সরকার। এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ২৩ জুলাই সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রজ্ঞাপনটি পড়ে শোনান।
ওই প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাশাপাশি তৃতীয় এবং চতুর্থ (১৪-২০তম গ্রেড) শ্রেণির চাকরিতেও কোটার নতুন এই হার বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফলে সব ধরনের সরকারি চাকরিতেই ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে।
পাঠকদের সুবিধার্থে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
এতে বলা হয়েছে, সরকার এই মর্মে আদেশ জারি করছে যে, সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রে কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত/আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে/কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সব গ্রেডে নিম্নরূপ কোটা নির্ধারণ করা হইল।
ক- মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, খ-মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, গ-ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং ঘ-শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ। নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদগুলো সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা এবং বিগত ৪ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের পরিপত্রটিসহ পূর্বে জারিকৃত এ-সংক্রান্ত সব পরিপত্র/প্রজ্ঞাপন/আদেশ/নির্দেশ/অনুশাসন রহিত করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এর আগে গত রোববার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। তবে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপিল বিভাগ সরকারি চাকরিতে কোটা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করেন। অর্থাৎ হাইকোর্ট তার রায়ে সর্বমোট ৫৬ শতাংশ কোটা বহালের কথা বললেও আপিল বিভাগ তা কমিয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করেন।
বিজ্ঞপ্তিটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
মন্তব্য করুন