পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং আওয়ামী লীগ চায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। কিন্তু কোনো দল যদি না আসে, আমরা তো কাউকে পালকি পাঠিয়ে নির্বাচনে নিয়ে আসব না।
সোমবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন শাহরিয়ার আলম।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন, সরকার এমনকি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। তবে এটা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। আপনি এখন লন্ডন থেকে নমিনেশন নেবেন, না মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া বা ঢাকা থেকে নেবেন- সেই সিদ্ধান্ত কেউ না নিতে পারলে তার দায়ভার তো আমরা নিব না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে চাইব সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু আমরা তো কাউকে পালকি পাঠিয়ে নির্বাচনে নিয়ে আসব না।
বিদেশি বন্ধুদের অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের আহ্বানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এটা নিয়ে খুব বিচার বিশ্লেষণ করিনি। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনকে বয়কট শুধু নয়, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে খুন পর্যন্ত করেছে। তবে ২০১৪ সালের সরকারের ধারাবাহিকতার যে সফলতা, সেখানে বন্ধুত্ব বেড়েছে, অংশীদারত্বের সম্পর্ক পরিণত হয়েছে, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং সেই সরকারের গ্রহণযোগ্যতার কমতি ছিল না। নির্বাচনে কে আসল, না আসল দিনশেষে তা গণ্য হয় না। আমরা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করতে পেরেছি কিনা, সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি কিনা, সেটিই বিবেচ্য।
আরও পড়ুন : রাষ্ট্রদূতদের সক্রিয়তার জন্য সাংবাদিকদের দুষলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের বাস্তবতা কি এখনো একই রয়েছে কিনা এবং বন্ধু দেশগুলোর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি কোনো পরিবর্তন দেখি না। তবে ২০১৮ এর আগে তাদের (বিদেশি কূটনীতিকরা) এতটা সক্রিয় দেখিনি। তারা এবার অনেকদিন আগে থেকে সক্রিয় হয়েছেন। এর উদ্দেশ্য ও কারণ তারাই বলতে পারবেন। তবে পরিষ্কারভাবে বলি, কে নির্বাচনে আসল কি আসল না, তা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিয়ামত বা উপাদান নয়। কারণ পৃথিবীতে এমন রাষ্ট্র নিকট অতীতেই ছিল যেখানে সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। এটা এই গ্রুপগুলোর মধ্যেই ছিল। এখনো আছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গুরুত্বও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তফাত আছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব সবসময় ছিল। কিন্তু আশপাশের দেশগুলোর বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্ব, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এসবকিছুই নতুন জোনে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো আগে আওয়ামী লীগও মোকাবিলা করেনি। যার ফলে নতুন সম্ভাবনার সঙ্গে চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করে ঠান্ডা মাথায় এগিয়ে যেতে হবে।
নির্বাচন বানচালে আন্তর্জাতিক কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা বা আরেকটা ওয়ান-ইলেভেনের আশঙ্কা আছে কিনা- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ পরবর্তী সময়ে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সঙ্গে ২০২৩ সালে বর্তমান নেতৃত্বের যে তফাত দেখি তা হলো, আওয়ামী লীগ হিসেবে দল এক জায়গায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ভিত এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ওয়ান-ইলেভেন বিএনপি সরকারের নিজস্ব চোরাবালির ফাঁদ ছিল, তারা ডেকে এনেছিল। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বয়স পাল্টেছে, তাদের রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে তারা সমস্যাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমরা এমন কোনো কর্মকাণ্ডও করিনি। তাই এমন আশঙ্কাও দেখছি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটের রাজনীতির শিষ্টাচার হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে কোনো বার্তা নিয়ে যাওয়া। অতীত নিয়ে বলার মতো বিএনপির সেই বার্তা কোথায়?
হিরো আলম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নির্বাচনী সহিংসতা নয়। এ ঘটনা নির্বাচনের ফল ও পরিবেশেও প্রভাব ফেলেনি। হিরো আলমের ওপর আক্রমণের ঘটনার আমরা নিন্দা করি। তবে এ প্রসঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা বলার আগেই সুষ্ঠু তদন্তে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা সরকারের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে মিডিয়াতে বিবৃতি দিয়েছেন। এটা স্পষ্ট ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন।
কংগ্রেসম্যানদের চিঠিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার: সম্প্রতি ১৪ মার্কিন কংগ্রেসম্যান জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধির কাছে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক চিঠি দিয়েছেন। এর আগেও একাধিক কংগ্রেসম্যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। এই চিঠি দেওয়ার বিষয়গুলোতে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা যখন এ ধরনের অবস্থার মধ্যে আছি, তখন কে চিঠি দিল না দিলে… নির্বাচনের আগে এ ধরনের চিঠি অনেক আসতে পারে। এটি অনেক আগে আপনাদের আমরা বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতা বা কংগ্রেসম্যানরা লিখছেন। কিন্তু স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমাদের খুবই গঠনমূলক বৈঠক হয়েছে বেশ কয়েকটি। সম্প্রতি যে সফরগুলো হয়েছে, তাদের যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল, যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি ও যে অগ্রগতি হয়েছে এবং সেগুলোও তারা প্রশংসা করেছে। এ ধরনের যোগাযোগ অব্যাহত থাকলে সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যে, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করে শাহরিয়ার।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে এমন চিঠি বহু আসতে পারে আগেই বলেছি। এগুলো নিয়ে একশন নেওয়ার ক্ষেত্রে আগে আমরা কিছু করতাম না। এখন দূতাবাসগুলোকে কংগ্রেসম্যান, সিনেটর ও রাজনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এর ফলে বের হয়ে এসেছে, একজন বলেছেন আমি তো সই করিনি, কিন্তু আমাকে সই করতে বলেছিল। আরেকজন বলেছেন, আমি তো আংশিক দেখে আমার স্টাফদের দেখতে বলেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক ভালো মন্তব্য করে বলেন, খুব ভালো বন্ধুত্বের জায়গায় নেই এমন দেশগুলোর সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বাড়ছে। তাই বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের বন্ধুত্ব বা বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে এটা করলে বা না করলে ব্যবসা বন্ধ হবে এমন উপসংহারে যাওয়া উচিত হবে না।
বিনিয়োগ পরিবেশ প্রতিবেদনে আমাদের ভালো পরিবেশের প্রশংসাও আছে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য ও ক্রয়ক্ষমতা হচ্ছে ব্যবসার টুল। এখানে নানা নেগোসিয়েশন চলে।
মন্তব্য করুন