বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে ঢাকার পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আসলে বিদ্রোহ ছিল না। এটি পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ২০০৮ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যরা। তারা দাবি করেন, পাশের দেশের যোগসাজশে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সহায়তায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এর সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত জোয়ানদের কোনো সম্পর্ক নেই।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন তারা। পিলখানায় সুপরিকল্পিতভাবে ৫৭ বিডিআর অফিসারসহ মোট ৭৪ জনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের দাবিতে এই প্রেস কনফারেন্স করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জোয়ানরা জানান, আমাদের সাজাপ্রাপ্ত অনেকে এখনো জেলখানায় রয়েছেন। তাদের সবার জামিন হয়েছে। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তারা সবাই নির্দোষ। আগামী ২৮ আগস্ট ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার বিশেষ আদালতে তাদের শুনানির তারিখ রয়েছে। এই মিথ্যা ও প্রহসনমূলক মামলায় নির্দোষ সব জোয়ানের মুক্তির দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে নায়েক সালাহউদ্দিন গাজী (৪৭৫৯২) বলেন, বিডিআর দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের সঙ্গে ১৮ থেকে ২০টি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়। তারা বাংলাদেশের মাটি দখল করতে এলেও প্রত্যেকটি যুদ্ধেই ভারতের বিএসএফ পরাজিত হয়। কারণ বিডিআর পরিচালিত হয় চৌকস সেনা অফিসার দিয়ে। এসবের কারণে তারা এই চৌকস সেনা অফিসারদের হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিডিআরকে দুর্বল করতে চেয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি অ্যাস কালারের মাইক্রোতে বিদেশি অস্ত্র ও সরঞ্জাম নিয়ে একদল কিলার পিলখানায় প্রবেশ করে। কিলিং মিশন শেষে বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিমান অপেক্ষা করে কাদের দুবাই নিয়ে গেল। সেখানে সজীব ওয়াজেদ জয় তাদের সঙ্গে দেখা করল কেন। এসব বিষয় তদন্ত করলে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ২৫ ফ্রেরুয়ারির ৭ দিন আগেই বিডিআরদের ব্যবহৃত ৪০ সেট পোশাক এক বিডিআর সদস্যের মাধ্যমে পিলখানা থেকে সচিবালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি ওই বিডিআর সদস্যকে বলেন, যারা এই কাজে সহযোগিতা করেছেন তাদের যেন কোনো বিপদ না হয়। নায়েক সালাহউদ্দিন বলেন, ঘটনার দিন ওই পোশাক পরে বাহির থেকে অপরিচিত লোক ভেতরে প্রবেশ করে। তাদের কারও গায়ে ওই পোশক ফিট হচ্ছিল না দেখে বুঝতে পারি তারা কেউ বিডিআরের সদস্য না। তারা কেউ কেউ হিন্দি ভাষায় কথা বলেছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিন হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়। এক পর্যায়ে ওই হেলিকপ্টার থেকে কিছু লিফলেটও ফেলা হয়। ওই লিফলেটে লেখা ছিল, এখন থেকে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বিডিআরের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিলদার নূরুজ্জামান বলেন, আমাদের বিচার করা হয়েছে সম্পূর্ণ প্রহসনের মাধ্যমে। বলা হয়েছে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু তারা কোনো কথা বলতে পারবে না। আমাদের কেউ কেউ আইনজীবী নিয়োগও করেছে। কিন্তু তারা বিচার চলাকালে বসে থেকেছেন। কোনো ধরনের কথা বলতে পারেননি। তিনি বলেন, আমাদের বলা হয়েছিল সাক্ষী দিলে তোমাদের চাকরি ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু কি সাক্ষী দেব জিজ্ঞেস করলে জানিয়েছে আমরা যা শিখিয়ে দেব সেটাই বলতে হবে। কোনো কোনো বিডিআর সদস্য সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়েছে। সেখানে তাদের ইচ্ছেমতো সাক্ষ্য লিখে নিয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো মিথ্যা সাক্ষী না দেওয়ায় জেল খাটতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- হাবিলদার আলিফ হোসেন, মফিজউল্লাহ, মিনাতুল্লাহ, নায়েক আক্কাস আলী, সৈনিক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।