শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফের দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস

বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে। ছবি : কালবেলা
বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে। ছবি : কালবেলা

অতিভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে এসব অঞ্চলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। আর এরই মধ্যে দুঃসংবাদ জানালো আবহাওয়া অফিস। সংস্থাটি আগামী তিন দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটির বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের আট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে।

এ ছাড়া শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; রংপুর ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটে পরিস্থিতি বেশি অবনতি হয়েছে। অন্যান্য জেলায় ধীরে ধীরে বন্যার অবনতি হচ্ছে। এতে ৩৭ লাখের বেশি মানুষ চরম মানবিক সংকটে পড়েছে।

এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬ জন। তাদের মধ্যে কুমিল্লায় ৪ জন, ফেনীতে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন রয়েছেন।

পর্যাপ্ত নৌযান ও অন্যান্য উদ্ধার যানের অভাবে পানিবন্দি এসব মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও ব্যক্তি উদ্যোগের সংগঠনগুলো তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ করছে। সরকারও বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানোর পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ফেনী। গত ৪০ বছরের মধ্যে এত ভয়াবহ বন্যা দেখেনি ফেনীবাসী। কয়েক লাখ মানুষ জীবনমৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে উদ্ধারের আকুতি জানাচ্ছে। অথচ বৈরী আবহাওয়া ও পানি বাড়তে থাকায় তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বন্যার্তদের উদ্ধার করতে না পারলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) পর্যন্ত ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুর বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলার ৬৫ উপজেলা ও ৪৯৫টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ কালবেলাকে জানায়, মৌসুমি লঘুচাপটি বাংলাদেশের ওপর স্থায়ী হয়ে আছে। বুধবার বিকেলেও এ লঘুচাপটি চট্টগ্রামের অংশে অবস্থান করছিল, যা পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছিল না। এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে খুবই স্ট্রংলি ম্যাডেন-জুলিয়ান অসিলেশন (এমজেও) অবস্থান করছে। ফলে সাগরে নিয়মিত গরম ও আর্দ্র বাতাস তৈরি হচ্ছে, যা উপকূলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্য এশিয়ার উপরে ‘জেট স্ট্রিম’-এর অবস্থান রয়েছে। এর ফলে ভারতসহ বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

পলাশ বলেন, বন্যার পেছনে ভারত বাঁধ খুলে দেওয়া অন্যতম কারণ। ভারি বর্ষণে নদীগুলোর পানি বিপৎসীমায় পৌঁছে যাওয়ায় ভারত বন্যার কবলে পড়েছে। প্রতি বছর ভারত বন্যার আক্রান্ত হলেই তারা বাঁধ খুলে দেয়। এ বছরও তারা কোথাও কোথাও বাঁধ খুলে দিয়েছে এবং কিছু জায়গায় অতিরিক্ত পানির কারণে বাঁধের গেটগুলো ভেঙে গেছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, এ তিনটি কারণ একই সঙ্গে ঘটলে তখন ওই এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় এবং এর ফলে পাহাড়ি ঢল ও বন্যার সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ দেশে ২০১৭ সালের জুন মাসে এ তিনটি কারণ একই সঙ্গে ঘটেছিল এবং এর কেন্দ্র ছিল চট্টগ্রাম। যার ফলে সেই বছর চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সতর্ক করে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০০-৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে এই বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

কোনদিকে যাচ্ছে বন্যা : বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টায় আবহাওয়া সংস্থাগুলোর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীগুলোর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরে উন্নতি হতে পারে।

একই সময়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। ফলে ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা ইত্যাদি নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরে উন্নতি হতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তোফাজ্জল হত্যায় ঢাবির ছয় শিক্ষার্থীর জবানবন্দি

পাহাড়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ফখরুলের বিবৃতি

৮ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের

রাজধানীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ২

সাবেক মন্ত্রীর আক্রোশের শিকার মাসুদ বিভাগীয় তদন্তে নির্দোষ

তথ্যগত বিভ্রান্তির কারণে সংবাদটি প্রত্যাহার করা হয়েছে

উন্নত চিকিৎসার অভাবে পা হারাতে পারেন সাকিব

লেবাননের প্রাণকেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা

সন্ত্রাস চাঁদাবাজি দখলদারির বিরুদ্ধে বিএনপির বিক্ষোভ

সকাল ৯টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১০

নিজ গাড়িচাপায় প্রাণ হারালেন ট্রাকচালক

১১

৮ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের

১২

‘সব আসনে এককভাবে প্রার্থী দেবে গণঅধিকার পরিষদ’

১৩

ঢাবির আওয়ামীপন্থি সিন্ডিকেট সদস্যদের পদত্যাগ দাবি

১৪

গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা জাতিসংঘে তুলে ধরবেন ড. ইউনূস

১৫

মিরপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ

১৬

প্রকাশ পেল ইকরাম কবীরের ‘খুদে গল্পের বই’

১৭

সৈনিক থেকে শিল্পপতি হাবিবুর

১৮

‘নবীর দেখানো পথে রাষ্ট্র উপহার দিতে চায় জামায়াত’

১৯

টাঙ্গাইলে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

২০
X