বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শরিফুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে আন্দোলন করেছে বৈষম্যের শিকার হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাদের দাবি সমবায় অধিদপ্তরের ডিজিসহ বেশ কয়েকজন মিলে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। স্বজনপ্রীতি করে পদোন্নতি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকার বাইরে বদলি, অকারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করা হতো মানসিক নিযার্তন। এমনকি মামলা দিয়ে হয়রানি করা হতো। এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পর থেকে সমবায় অধিদপ্তরাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের ব্যান্যারে পদোন্নতি বঞ্চিত ও বৈষম্যশিকার হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারি আন্দোলন করেছে।
৮টি দাবি তুলে ধরে আন্দোলনকারী বলেন,পদোন্নতি বঞ্চিত ও যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুত পদোন্নতি দিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে জেলা সমবায় অফিস ঢাকা বা মেট্রোপলিটন থানা সমবায় দপ্তরে কর্মরতদের ঢাকার বাহিরে দ্রুত বদলি করতে হবে। সমবায় অধিদপ্তরকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারী হয়রানি বন্ধ করতে হবে। বদলি পদোন্নতি ও নিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্র দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। একই লোকদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেট্রো বা থানা বা জেলা সমবায় অফিসে পদায়ন করা চলবে না। যাদের নামে মামলা করা হয়েছে সেই মামলা তুলে নিতে হবে। দুর্নীতিবাজ বাবলা দাশ গুপ্তার দ্রুত বিচার করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক হাফিজুল হায়দার, যুগ্ম নিবন্ধক প্রশাসন রিক্তা দত্ত, উপনিবন্ধক (প্রশাসন) আতিকুল কবির, যুগ্ম নিবন্ধক ঢাকা বিভাগ শেখ কামাল হোসেন, জেলা সমবায় অফিসার সাদ্দাম হোসেন, সমবায় অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাবলা দাশ গুপ্তার সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেটে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি, নিয়োগ, ঘুষ বাণিজ্য ছিল তাদের অন্যতম কাজ। এরমধ্যে বাবলা দাশ গুপ্তার বেশি বেপোরোয়া। তাদের দ্বারা যুগ্ম নিবন্ধক শামীম রেজা, উপ-নিবন্ধক মিজানুর রহমানসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেকেই প্রমোশন না দিয়ে অবসরে পাঠানো এবং প্রমোশনের সময় হওয়া সত্ত্বেও প্রমোশন না দিয়ে একইপদে দীর্ঘদিন রাখা হয়েছে। এমনকি কাউকে বছরে দুই থেকে তিনবার বদলি করে হয়রানি করা হয়েছে। তবে যারা আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট ছিল তাদেরকে বিভিন্ন সুয়োগ-সুবিধাসহ দীর্ঘদিন ঢাকার মধ্যে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে।
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রাইসুল ইসলাম মিঠু কালবেলাকে জানায়, সমবায় প্রতিটি সেক্টরে অনিময়-দুর্নীতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের পরিচয়ধারী যারা তাদের বিভিন্নভাবে ঢাকায় পোস্টিং করা হতো। এসব বিষয়ে আমি প্রতিবাদ করায় নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে আমার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলায় শিকার হওয়া অন্যা কর্মকর্তারা হলেন- শেখ আবদুস শুক্কুর ও শহিদুল ইসলাম।
অভিযোগ আছে, বিভিন্নভাবে হয়রানি করার পর চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয় প্রায় প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে। পরে মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে দুই জন মারা যান। তারা হলেন- অতিরিক্ত নিবন্ধক মো. ইকবাল হোসেন ও সহকারী পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম। এছাড়া যুগ্ম নিবন্ধক আবু তাহের চৌধুরীকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে চাপ প্রয়োগ করে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেন।
গত ৫ জুন সমবায় অধিদপ্তরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫১১টি পদে কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়ম কারায় বাতিল করা হয় সেই পরীক্ষার ফল। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস, চাকরি দেওয়ার চুক্তি করে প্রায় শত কোটি বাণিজ্য করে সমবায় অধিদপ্তরের ডিসিসহ একটি চক্র। এই অনিয়ম বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খরব প্রকাশের নিয়োগ বন্ধ করে একটি তদন্ত কমিটির করে এবং তার সত্যতা পায়। পরে ৫১১টি পদে কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়। নিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ৫১১টি পদে নিয়োগে এমসিকিউ পরীক্ষা বাতিল করে নতুন পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম কালবেলাকে জানায়, আমি কিছু করিনি কেউ অনিয়ম-দুর্নীতির কথা বলে থাকলে, মিথ্যা বলছে। ৫১১টি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস এবং নিয়োগ বাণিজ্য কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার সঙ্গে আমি জড়িত না। নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জে জেলার লোহজং উপজেলার সমবায়ের সহপরিদর্শক গোলাম মাওলা কালবেলাকে জানায়, সমবায় অধিদপ্তর দুর্নীতির আঁকড়ায় পরিণত হয়েছে। এখানে স্বাজনপ্রীতি ও ঘুষ ছাড়া কোনো কিছু চলে না। এর মূলে রয়েছে ডিজিও তার সিন্ডিকেটে চক্র। প্রতিবাদ করলেই প্রমোশন আটকে দিয়ে ঢাকা বাহিরে বদলী করা হতো। এজন্য ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের সমবায়ের সব কর্মকর্তারা ডিজি অপসারণ চেয়ে আন্দোলন করছে।
মানিকগঞ্জ শিবালয় উপজেলার সমবায়ের সহ-পরিদর্শক ইলিয়াস শিকদার কালবেলাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যায় অনিয়ম করে আসছেন ডিজিসহ একটি চক্র। যারা এসব করছে ডিজি জেনেও চুপ। কারণ এই সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে তিনি জড়িত। প্রশ্নফাঁস এবং টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়া ৫১১টি পদের চাকরি নিয়োগ বাতিল হয়েছে। সমবায় অধিদপ্তরের সিন্ডিকেট চক্র ভাঙতে এবং ডিজির অসাধারণ চেয়ে আন্দোলন করছি। তার অসাধারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
মন্তব্য করুন