মৃত্যুর পর মাস পার হতে চললেও কোটা আন্দোলনকে ঘিরে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত আসিফ ইকবালের বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম। পরিবারের সদস্যরা এই অমানবিক মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। সন্তান হারিয়ে পরিবারের, মা-বাবার চোখের পানি এখনো থামেনি। শুধু তারা প্রলাপ বকছেন, আমার সন্তানের বিচার চাইব কার কাছে।
কোটা আন্দোলনে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে বাবা আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে নামাজ পড়তে বের আসিফ ইকবাল। নামাজ শেষে তার বন্ধুদের সঙ্গে সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় আন্দোলনরত ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ অতর্কিতভাবে গুলি চালালে সে আহত হয়। পরে তার বন্ধুরা তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। আসিফ বিবিএ পড়া শেষ করে একটি গার্মেন্টসের বায়িং হাউজেসে চাকরি করত।
আসিফ ইকবালের মা ডেইজি বেগম জানান, আসিফ আমাকে জানায়, আম্মা আসতে দেরি হবে। তোমরা খেয়ে নিও। আমি জানতে চেয়েছিলাম, তুমি কোথায় যাবা? ও কিছু বলেনি।
তিনি বলেন, এখন সবাই আমাকে বলছে, ছেলেকে কেন বাইরে যেতে দিলাম। বাইরে এত গণ্ডগোল, তারপরও যাইতে দিছেন। আমার ঘর তো এখন খালি- কেউ নাই তো আমার ঘরে।
আসিফের বাবা আব্দুর রাজ্জাক জানান, শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে সে আমার আগেই বের হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোনো খবর পাচ্ছিলাম না। সন্ধ্যার দিকে তার বন্ধুরা আমাকে জানায় আসিফের মৃত্যু হয়েছে। পরে সব ঘটনা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ি। তার এমনভাবে চলে যাওয়া আমার পরিবার কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। আল্লাহর কাছে আমাদের সব বিচার।
তিনি জানান, হেলিকপ্টার থেকে পুলিশের ছোড়া গুলিতে আসিফের মৃত্যু হয়েছে। গুলি ওর বুকে বিদ্ধ হয়ে বের হয়নি। বুকের মধ্যেই থেকে যায়।
তিনি আরও জানান, রাত ১১টার দিকে লাশ নিয়ে আসে, সেদিন রাত ১২টা থেকে কারফিউ থাকায় লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাগুরায় চলে যায়। এখনো আমার মনে হয় পেছনে পেছনে আব্বু বলে ডাকছে। আব্বু ছাড়া কথা বলত না।
আসিফ ছাড়া যেন এলাকা ফাঁকা হয়ে গেছে তার সহচরদের কাছে। তার এক বন্ধু জানান, এলাকায় আসিফ নামে অনেকেই চিনত না। মানুষ যখন শুনছে, আসিফ মারা গেছে তখন চিনতে পারে নাই অনেকেই। যখন শুনছে ব্রাদার মারা গেছে, তখন সবাই চিনছে। খুব মিশুক হওয়ায় সবাইকে ব্রাদার ছাড়া কথা বলত না।
তিনি আরও জানান, আসিসের মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। ওকে তো আসলে হেলিকপ্টরা থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই।