চাকরি স্থায়ীকরণের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রেলভবন ঘেরাও করেছে রেলওয়ের প্রায় সহস্রাধিক অস্থায়ী গেট কিপার। তারা চাকরি স্থায়ী করা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে গেটকিপার নিয়োগের তীব্র প্রতিবাদ জানান। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা রেলভবন ভাঙচুর করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (১৮ আগস্ট) বিকালে তারা রেলভবন ঘেরাও করে সবাইকে আটকে রাখে। এসময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। রাত আটটায় দাবি পূরণে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ২০ আগস্টের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২১ আগস্ট ফের রেলভবন ঘেরাওসহ অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
আকস্মিকভাবে রেলভবন ঘেরাও করার সময় ভিতরে থাকা রেল সচিব, রেলের মহাপরিচালক, এডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিলেন।
এ বিষয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে ২০১২ সাল থেকে কাজ করা টঙ্গি অঞ্চলের গেট কিপার রিয়াজ উদ্দীন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের আওতায় গেট কিপারের কাজ করছি। বর্তমানে আমাদের বাদ দেবার জন্য চক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ৯ মাস আমরা বেতন ভাতা পাচ্ছি না। ইতোপূর্বে আমরা অনেকবার আন্দোলন করেছি। কিন্তু শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন সাবেক রেলমন্ত্রী, সচিব, ডিজিরা। সংকট যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সাবেক সরকার তাদের বাদ দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দেয়। যার ফলে আমরা প্রায় ২ হাজার গেট কিপার বেকার হয়ে মানবেতন দিনযাপন করছি।
এ বিষয়ে রেলের পরিচালক (জনসংযোগ) নাহিদ হাসান খান বলেন, অস্থায়ী গেট কিপারদের যে দাবি সেটা অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা না বলে মেটানো যাচ্ছে না। কেন না, অর্থমন্ত্রণালয় অস্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ না করার নির্দেশনা দিয়েছে। সে কারণে অস্থায়ী গেট কিপারদের দাবি মানতে হলে আগে অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসতে হবে ত্রিপাক্ষিক ভাবে।
স্বারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন- শাওন, ফেরদৌস, সাব্বির, রুবেল, মোহন, কাদের, রাশিম. অনুপ ও খায়রুল আলম।
আন্দোলকারীদের অন্যতম এক নেতা কালবেলাকে বলেন, আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণসহ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বেলভবন ঘেরাও করেছিলাম। তিনদিনের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২১ আগস্ট আবারো রেলভবন ঘেরাওসহ প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্বারকলিপি দেওয়া হবে।
অস্থায়ী গেট কিপার শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি কাউসার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান জানান, দীর্ঘক্ষণ রেলভবন অবরোধের পরে সচিব ও ডিজি তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। তার কি সিদ্ধান্ত দেন পরে জানা যাবে।
এদিকে আন্দোলনকারীরা রেলভবনের গেট ও কাচের দরজা ভাঙচুর করেছেন। এসময় ভবনের আরএনবির কর্মীদের সঙ্গে শ্রমিকদের হাতাহাতির খবর পাওয়া গেছে।
অস্থায়ী রেলকর্মীরা জানান, সারাদেশে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত হাজার অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ যারা ইতোমধ্যে ১২ থেকে ১৪ বছর ধরে রেলওয়েতে কাজ করছেন। ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে তাদের চাকরি স্থায়ী করার চুক্তি ছিল। কিন্তু আজও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চাকরি স্থায়ী করেনি। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অস্থায়ী রেলকর্মীরা।